নওগাঁয় ওএমএসের চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ
নওগাঁ শহরের কালিতলা এলাকায় খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) সরকারি চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকের উপস্থিতিতেই মাস্টাররোলে জনপ্রতি পাঁচ কেজি চাল ও আটা বিক্রি দেখালেও দেওয়া হচ্ছে তিন কেজি করে আটা অথবা চাল। কিন্তু বিক্রির সময় একই ব্যক্তির কাছে চাল ও আটার মাস্টাররোলে টিপসই নেওয়া হচ্ছে।
দরিদ্রদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নওগাঁ শহরের কালিতলা এলাকায় ওএমএস ডিলার পলাশ কুমার দাসের দোকানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
দুপুর আড়াইটার দিকে আবারও গিয়ে দেখা যায়, দোকানে কর্মচারী একা বসে আছেন কোনো বিক্রি নেই। ডিলারের দোকান ফাঁকা। খাদ্য বিভাগের তদারকির দায়িত্বে থাকা নওগাঁ সদর খাদ্যগুদামের নৈশপ্রহরী আবু বক্কর সিদ্দিক সার্বক্ষণিক সেখানে দায়িত্বে থাকার নিয়ম থাকলেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, ওএমএস ডিলার এবং খাদ্য বিভাগের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীর যোগসাজসে অবিক্রিত চাল ও আটা রাতে অধিক দামে বিক্রি করা হয় কালোবাজারে।
এ ব্যাপারে আজ সোমবার দুপুরে খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হলে তাঁদের টনক নড়ে। নড়েচড়ে বসেন তাঁরা। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। অবশেষে বিকেল ৪টার দিকে আবারও কালিতলা ওএমএস ডিলার পলাশ কুমার দাসের দোকানে গিয়ে পাওয়া যায় খাদ্য বিভাগের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিককে।
আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তাঁর পারিবারিক কাজে কিছু সময়ের জন্য ডিলারের দোকানে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
এ সময় তদারকির দায়িত্বে থাকা খাদ্য বিভাগের কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে বিক্রির বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮২ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষের কাছে পাঁচ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়েছে।’
সেই হিসেবে মাত্র ৯০ কেজি (তিন বস্তা) চাল অবশিষ্ট থাকার কথা থাকলেও ডিলারের দোকানে ২২ বস্তা চালের মজুদ পাওয়া যায়। এত চাল কোথা থেকে এলো তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কেউ। আর ১২৪ জনের কাছে পাঁচ কেজি করে আটা বিক্রি করা হয়েছে। এ হিসাবে ৬২০ কেজি আটা বিক্রি হয়েছে। তাহলে এখানে প্রশ্ন হলো খাদ্য বিভাগ সরবরাহ করেছে ৫০০ কেজি আটা। সেখানে অতিরিক্ত ১২০ কেজি আটা কোথায় থেকে এলো।
এ ব্যাপারে ডিলার বা খাদ্য বিভাগের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ওএমএস ডিলার পলাশ কুমার দাসের দাবি, আগামী পরশু (৩১ মার্চ) বিক্রির জন্য চাল অগ্রিম নিয়ে এসে মজুত করা হয়েছে। আটার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আটা পরশু (৩১ মার্চ) সকালে আসবে।’
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করতে সরকার খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েক বছরে ধরে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে। মাঝেমধ্যে চাল বিক্রি বন্ধ থাকলেও আটা বিক্রি চলে বছরজুড়েই।
নওগাঁ সদর উপজেলার শহর এলাকার জন্য খাদ্য বিভাগ ১৪ জন ওএমএস ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। এই ১৪ জন ওএমএস ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ১০ জন পাঁচ হাজার কেজি চাল ও পাঁচ হাজার কেজি আটা বিক্রি করবে। বাকি চারজন ডিলারের বিক্রি বন্ধ থাকবে। সরকারি সব ছুটির দিনে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি বন্ধ থাকবে।
খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রিতে অনিয়ম করা হচ্ছে কেন এবং খোলাবাজারে বিক্রির জন্য চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নে ওএমএস ডিলার পলাশ কুমার দাস বলেন, ‘একজন ওএমএস ডিলার প্রতি মাসে রোটেশনে ১৪ থেকে ১৫ দিন চাল এবং আটা বিক্রি করার সুযোগ পায়। এ সময়ের আয় দিয়ে পুরো মাসের খরচ চালানো লাগে। দুজন কর্মচারীর বেতন দিতে হয়। তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের খরচ দিতে হয়। চাল ও আটার ডেলিভারি অর্ডার করার সময় খাদ্য গুদামে খরচ দিতে হয়। তাই একটু অনিয়ম করতে হয়। এটা এমন কিছু না মাত্র উনিশ-বিশ।’
পুরো নিয়মের মধ্যে থেকে কোনো ওএমএস ডিলার খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি করতে পারবে না বলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ খাদ্য বিভাগের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পরিদর্শক জাকারিয়া আল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমি নিজেই আজকে ওএমএস ডিলার পলাশ কুমার দাসের দোকান পরিদর্শন করেছি। বিকেলে ৫টা পর্যন্ত তাঁর ৫০০ কেজি আটা এবং ৪৩০ কেজি চাল বিক্রি হয়েছে। বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। অতিরিক্ত ৭০ কেজি অবিক্রিত চাল আগামী দিনে বিক্রির সময় অ্যাডজাস্ট করা হবে।’
তদারকি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের খরচ দেওয়া এবং চাল, আটা উত্তোলনের সময় খরচের বিষয় অস্বীকার করে নওগাঁ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আমিনুল কবির বলেন, ‘খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রির সময় কোনো প্রকার অনিয়ম করার প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ওই ডিলারকে সাসপেন্ড করা হবে। পলাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের চাল কম দিয়ে কালোবাজারে চাল বিক্রির যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে তদারকি করে দেখব। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে খাদ্য বিভাগের নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'