দেশে ফিরলেন সৌদি আরবে নির্যাতিত সেই সুমি
সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উদ্ধারে আকুতি জানানো সেই সুমি আক্তার অবশেষে দেশে ফিরলেন। বিমানবন্দরে অবতরণের পর সুমি নিজ জেলা পঞ্চগড়ের পথে রওনা হয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে সুমিকে বহনকারী এয়ার অ্যারাবিয়ার জি৯-৫১৭ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণ করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) উপসচিব মো. জহিরুল ইসলাম।
এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠিকতা সারতে সহযোগিতা করেন সুমিকে। তবে এ সময় তাঁকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণের জন্য উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্বামী নুরুল ইসলাম এবং দুই সন্তান রিফাতুল ইসলাম ও সিফাতুল ইসলাম। তাঁদেরও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
পরে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সকাল সোয়া ৮টার দিকে সুমিকে ভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের করা হয়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুমিকে নিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে যাত্রা করে একটি টিম। সেখানে সুমিকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁর মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান সুমি আক্তার (২৬)। সেখানে পৌঁছানোর সপ্তাহখানেক পর থেকেই তাঁকে মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে ফেসবুকে এক ভিডিওতে তিনি তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানান এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সুমির ওই ভিডিও ভাইরাল হলে তা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে সৌদি আরবে সুমির নিয়োগকর্তা তাঁকে দেশত্যাগের অনুমতি না দেওয়ায় আইনি জটিলতায় আটকে যায় তাঁর দেশে ফেরা। পরে সুমিকে দেশে ফেরাতে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’কে বিমানের টিকেটসহ ২২ হাজার রিয়াল (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) পরিশোধ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে গত ৫ নভেম্বর অনুরোধ করে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল।
এরপর জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রম আদালতে এ বিষয়ে একটি শুনানির আয়োজন করে। দেশটির নাজরান শহরে অবস্থিত শ্রম আদালতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সুমি আক্তারের নিয়োগকর্তা, সুমি আক্তার ও কনস্যুলেট প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে কফিলের দাবি করা ২২ হাজার সৌদি রিয়েল পরিশোধের আবেদন নামঞ্জুর হয়। পাশাপাশি কনস্যুলেটের আবেদনের কফিলকে ‘ফাইনাল এক্সিট’ দিতেও আদেশ দেন ওই শ্রম আদালত।