দেখে না সন্তান, ঠেলাগাড়িতে চলে অভাবের সংসার
জাফর ও মোখলেস। দুজনই সত্তরোর্ধ্ব। ছেলেমেয়ে থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করতে হয় তাঁদের। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠেলাগাড়িতে করে বিভিন্ন পণ্য ঠেলে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যান তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাটের বাদামতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্যভর্তি একটি ঠেলাগাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন জাফর ও মোখলেস।
জাফরের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তিনি জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনায়। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁরা সবাই নিজেরা বিয়ে করে সংসার করছেন। কিন্তু জাফরকে দেখার জন্য কেউ নেই। তাই নিজেই ঢাকায় কষ্ট করেন দুমুঠো আহারের আশায়।
জাফর বলেন, ‘বৃদ্ধ হয়ে গেছি। অনেক বছর ধরে ঠেলাগাড়ির কাজ করি। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিভিন্ন ফল-ফলাদি, দড়ি, সুতা, কাগজ ও অন্যান্য পণ্য ঠেলাগাড়িতে নিয়ে যাই। বিনিময়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। সারা দিন সব খরচ বাদে পকেটে থাকে ২০০ টাকা। আর সে টাকা বাড়িতে থাকা স্ত্রীকে পাঠাতে হয়।’
জাফর জানান, বাদামতলীতে একটি ভাসমান হোটেল রয়েছে। সেখানেই ঢালাও বিছানা পেতে রাতে থাকতে হয় তাঁকে। খরচ দিতে হয় ৪০ টাকা।
অন্যদিকে বৃদ্ধ মোখলেস জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে থাকেন তিনি। ২০ বছর ধরে ঠেলাগাড়ির কাজ করেন। এর পাশাপাশি কুলির কাজও করেন তিনি।
মোখলেস বলেন, ‘প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। শরীরের জোর না থাকায় এখন কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় হাঁপানি রোগও রয়েছে। অনেক কষ্ট হলেও এ কাজ করে সংসার চালাই।’
মোখলেস আরো বলেন, ‘আমাদের বয়সী অনেকেই ভিক্ষা করেন। কিন্তু আমি নিজের পরিশ্রম দিয়ে সংসার চালাই। কারো কাছে হাত পাততে আমার ভালো লাগে না।’
বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বলেন, ‘জাফর ও মোখলেস চাচা অনেক বছর ধরেই এ কাজ করেন। তাঁদের পরিশ্রমের টাকার অনেক দাম। অনেক শারীরিক পরিশ্রম করে এ কাজ করতে হয় তাঁদের। এই বুড়ো বয়সে যদি তাঁদের ছেলেমেয়েরা দেখত, তাহলে এখন আর কাজ করতে হতো না।’
‘সরকারের উচিত খেটে খাওয়া বৃদ্ধ মানুষদের সরকারি সহায়তা দেওয়া,’ বলছিলেন রাজু।