‘দুর্নীতিমুক্ত নগর উপহার দিতে চাই’
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতে নিহত হন ফজলে নূর তাপসের বাবা শেখ ফজলুল হক মনি ও মা আরজু মনি।
ওই সময় তাপসের বয়স ছিল মাত্র পৌনে চার বছর। এরপর দাদা-দাদি ও ফুপা, চাচা-চাচিদের কাছেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।
১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের ওলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিদ্যায় স্নাতক (এলএলবি) সম্পন্ন করেন। ১৯৯৭ সালে ‘বার অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস’-এর জেনারেল কাউন্সিলের অধীনে বার ফাইনাল কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি লিংকনস্ ইন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন সদস্য ।
তাপস পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেন এবং নির্বাচিত হন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাপসের দাদা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ফুপু। তাঁর বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান।
তাপস আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নির্বাচন ও ঢাকা মহানগর নিয়ে তিনি সম্প্রতি কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : নির্বাচনের নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : ২০০৮ সালে আমি প্রথম নির্বাচন করি, রাজনীতিতে আসি। সেটা ছিল আমার শুরু। প্রথম থেকেই জনগণ আমাকে খুব ভালোবাসা দিয়েছে। আমিও চেষ্টা করেছি তাদের সেবা করার জন্য। আমি তাদের বলেছিলাম, আমি জানি না আপনাদের কতটুকু সেবা করতে পারব, তবে আমি আশা করি আমি আপনাদের কে পূর্ন সময় দিব। আপনাদের সুখে দুখে থাকব। আমি বিশ্বাস করি আমি সেটা পেরেছি, জনগণ সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই আমি বারবার নির্বাচিত হয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : নগর নিয়ে আপনার ভাবনা কী ?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : যে পর্যায়ে আমরা কাজ করতে চাই, বা যে স্বপ্নগুলো আমরা দেখি, নিরলস পরিশ্রম করা সত্ত্বেও সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না। জনগণ হয়তো অসন্তষ্ট না কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। ইনশাআল্লাহ আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলে নাগরিকের মৌলিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করব। আমরা একটা মহাপরিকল্পনা করেছি ৩০ বছর মেয়াদী। সেই কারণেই আমার অন্তরে তাগিদ থেকে এবার সুযোগ নিয়েছি নগরে নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য, আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : নগরের সমস্যাগুলো আপনি কীভাবে সমাধান করতে চান?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : আমরা এটাকে পাঁচভাগে ভাগ করেছি। প্রথম হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং পুনরুদ্ধার করা। দ্বিতীয় হলো সুন্দর ঢাকা, যা সবুজায়ন করব, বায়ু দুষণ রোধ করব। তৃতীয় হলো সচল ঢাকা। আমাদের যে দৈনিক কাজকর্মে নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা আমি কীভাবে পৌঁছাব এই দুশ্চিন্তা এটা আমি শেষ করতে চাই। চতুর্থ হলো আমাদের সুশাসিত ঢাকা। সুশাসন যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে আমার নাগরিকরা আমার নগরের সুবিধাগুলো পাবে না। সুশাসিত ঢাকার আওতায় এতিহ্যবাহী ঢাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কায়েম করে আমরা সুশাসন নিশ্চিত করব যেটা আগে হতো। পঞ্চম হলো দুর্নীতিমুক্ত একটি নগর উপহার দেওয়া। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এটা আমার রাজনৈতিক প্রলাপ তবে ইনশাআল্লাহ এটাই আমার লক্ষ্য।
এনটিভি অনলাইন : নির্বাচিত হলে কোন নতুন চমক পাবে কি না ?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : না, আমি এ ধরনের কিছু বলছি না। আমি বার বার বলছি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর কথা এবং সেখানেই জোর দিচ্ছি। আমি আগে মৌলিক সুবিধাগুলো দেই তারপর এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে অন্য অনেক বিষয়। যেহেতু ৪৮ বছরে মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারিনি ।
এনটিভি অনলাইন : পুরাতন ঢাকা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : বিদেশে কিন্তু আলাদা একটা ওল্ডটাউন থাকে, সেখানে ওল্ড টাউনকে কেন্দ্র করে কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে, যেটা আলাদা মর্যাদা বহন করে , আমাদের সেই জায়গাটায় আমরা ফিরে যেতে চাই। যেটা আমি বলছি ঐতিহ্যে ঢাকাকে পুনরুদ্ধার করা। কিছু রাস্তা থাকবে হাঁটার, কিছুটা থাকবে রিকশার, কিছুটা থাকবে ধীরগতির গাড়ি চলার জন্য, কিছু রাস্তা থাকবে দ্রুত গাড়ি চলার জন্য। আমি চাইব আমাদের ঘোড়ার গাড়িগুলোও যেন স্বচ্ছন্দে চলতে পারে। সাতদিনের মধ্যে পুরো ঢাকার বিল বোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলব।
এনটিভি অনলাইন : আগামী প্রজন্ম তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : পরিকল্পনা আছে আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ডে খেলা মাঠ স্থাপন করব। এছাড়া ঢাকাতে দখল হওয়া খেলার মাঠগুলোকে উদ্ধার করা, বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকীকরণ, যুবসমাজকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আগামী দিনের জন্য তরুণদের দক্ষ করে তোলাই আমার মূল লক্ষ্য।
এনটিভি অনলাইন : গেল বছর ডেঙ্গু ছিল নগরীর অন্যতম সমস্যা, এ ক্ষেত্রে আপনি নির্বাচিত হলে কী পদক্ষেপ নেবেন?
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস : অবশ্যই গুরুত্ব দেব। অধিকতর গুরুত্ব দেব। মাসব্যাপি নয় পুরো বছরব্যাপি এর কার্যক্রম থাকবে। এটা হবে দৈনন্দিন কাজ। আমি যদি নির্বাচিত হই বছরে ৩৬৫দিন, সপ্তাহে সাত দিন ,মাসে ৩০ দিন দৈনিক ২৪ ঘণ্টা, ঘণ্টায় ৬০ মিনিট আমি নিজেকে নগরবাসীর পাশে এবং সাথে থাকব। নগর ভবনের দরজা কেবল মন্ত্রী, এমপি-নেতাকর্মীদের জন্যই নয়, সাধারণ নাগরিকদের জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা গড়ে তুলব।