দুবাইয়ে নারী পাচার, গ্রেপ্তার তিন
দুবাইয়ের পাঁচতারকা হোটেলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নারী পাচারের অভিযোগে এক গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে নারীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো।
আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন গডফাদার আজম খান এবং তাঁর দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড ও আনোয়ার হোসেন ময়না।
সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে। তাঁর বাবা দুবাইয়ে থাকতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ে চলে যান। দুবাইয়ে তাঁর চারটি তারকাযুক্ত হোটেলের অংশীদার রয়েছে। হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যমত মালিক। আজম খান আট বছর ধরে নারী পাচারের ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন।’
সিআইডির ডিআইজি বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুবাই সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। পরে তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আজম খান দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।’
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আজম খান এই নারী পাচার চক্রের মূল হোতা। এসব হোটেলে কাজের নামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অল্প বয়সী সুন্দরী তরুণীদের যৌনকাজে বাধ্য করত। আজম খানের সহযোগী আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ডসহ আরো অনেক ড্যান্স প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখাত। পরে চাহিদামতো এসব তরুণীকে তারা দুবাইয়ে পাচারের ব্যবস্থা করত। সেখানে পৌঁছানোর পর আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স ক্লাবগুলোতে আটক রেখে চলত যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন। তাদের (ভুক্তভোগী) মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা বললেও কোনো টাকা দেওয়া হতো না।’
এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থাকার সব অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছে সিআইডি। আজম খান গত আট বছর প্রায় এক হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আজম খানের ৫০ জনের মতো দালাল (ট্রাভেল এজেন্সির) সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তিনি ওই দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অল্প বয়সী নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। পরে তাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে তাঁর বিভিন্ন হোটেলে চাকরি দিতেন। একপর্যায়ে তাদের তাঁর ড্যান্স বারে নাচার জন্য বলেন। কোনো কোনো সময়ে হোটেলে ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। ওই নারীরা রাজি না হলে তাঁদের খেতে না দিয়ে মারধর করে। কোনো কোনো সময় তাঁদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো।’
ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন, ‘অপরাধের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তার সবকিছুর মধ্যেই তিনি (আজম খান) জড়িত। বাংলাদেশেও আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সিআইডি বাদী হয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলা করে।’