দুই হাসপাতালে ‘করোনা নেগেটিভ’, হঠাৎ ‘পজিটিভ’ হয়ে রোগীর মৃত্যু!
মুজতবা শাহরিয়ার সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। কিন্তু সাধারণ জ্বর ভেবে ওই অবস্থার ভেতর দিয়ে তিনি অফিসের কাজ বাসায় থেকে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জ্বর কমছিল না। মুজতবার চিকিৎসক বোন-জামাইয়ের পরামর্শে করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করালেন একটি হাসপাতালে। কিন্তু ফলাফল আসল ‘করোনা নেগেটিভ’।
এই যখন অবস্থা তখনো মুজতবা শাহরিয়ার বাসায় থেকে অফিসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জ্বর আর কমছিল না। শরীরের অবস্থা যখন আরো খারাপ হতে থাকে তখন তিনি আবারও একটি হাসপাতাল থেকে করোনার পরীক্ষা করান। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল আগের মতোই, ‘করোনা নেগেটিভ‘।
দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যখন নেগেটিভ আসে তখনো জ্বর নিয়ে ঘুরে বেড়ান মুজতবা শাহরিয়ার। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। ২৫ এপ্রিল তিনি রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান। হাসপাতালে যাওয়ার পর উপসর্গ দেখে পুনরায় তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।
অবশেষে তৃতীয়বার তাঁর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে ‘করোনা পজেটিভ’। সে সময় তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানেই ২৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের করোনাবিষয়ক মুখপাত্র ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান কচি এবং সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিনের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে
ডা. মো. মাহবুবুর রহমান কচি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মুজতবা শাহরিয়ার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসার আগে আরো দুটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল। এরপর যখন তাঁর শরীরের অবস্থা খারাপ হয় তখন তিনি আমাদের এখানে আসেন। আমরা তাঁর করোনার উপসর্গ দেখে নমুনা সংগ্রহ করি। নমুনা পরীক্ষার পর তাঁর করোনা পজেটিভ আসে। কিন্তু এর আগে কোন দুই হাসপাতালে তাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তা আমি বলতে পারছি না।’
ডা. মো. মাহবুবুর রহমান কচি আরো বলেন, ‘করোনা পজেটিভ আসার পরপরই আমরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখি। কারণ তাঁর শরীরের অবস্থা ভালো ছিল না। এভাবে রাতটা পার হয় কোনোভাবে। ২৬ এপ্রিল সকালে তিনি মারা যান। তারপর তাঁর লাশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দাফন করা হয়।’
কিন্তু পরপর দুই পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসার কারণ কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান কচি বলেন, ‘এটা একটি নতুন ভাইরাস। বিশ্বের অনেক স্থানে এমনটি হচ্ছে। এ ধরনের পরীক্ষার ফলাফলে নেগেটিভ-পজেটিভ ফলস (মিথ্যা) রিপোর্ট আসতে পারে। কেন আসতে পারে এটা ভাইরোলজিস্টরা বলতে পারবেন।’
যোগাযোগ করা হলে একই হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পজেটিভ হওয়ার পরও পরপর দুটি হাসপাতালের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যদি আমার নমুনার ফলাফল হতো তাহলে কী হতো? এরকম হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। আগে থেকে সঠিক ফলাফল জানা গেলে তাঁকে সুস্থ করাও হয়তো যেত; আবার ভাইরাসটির বিস্তার রোধেও কাজ করা যেত।’
করোনা পজেটিভ হওয়ার পরও কেন নমুনা পরীক্ষায় দুবার নেগেটিভ ফলাফল এলো- এমন প্রশ্ন করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ডা. শাহিনা তাবাসসুম বলেন, ‘নানা কারণে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। নমুনা ঠিকমতো সংগ্রহ করা না হলে আসতে পারে। নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করতে অনেকে দেরি হলে আসতে পারে। এ ছাড়া পরীক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের টেকনিক্যাল ফলটের (ত্রুটি) কারণেও নেগেটিভ আসতে পারে।’
সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘মুজতবা শাহরিয়ারের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। সিটি ব্যাংক তাঁর পরিবারের জন্য যা যা করার সব করবে। কিন্তু দুঃখ লাগছে, তাঁর পরিবার দাফনের সময়ও থাকতে পারেনি সেখানে। খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এ এক কঠিন মৃত্যু!