দুই ছেলেই বাড়িতে রাখেননি বৃদ্ধা মাকে, এগিয়ে গেলেন চিকিৎসক
করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বড় ছেলের বাসা থেকে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বড়কান্দা ইউনিয়নের ছোট ছেলের বাসায় যান ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা। এসব উপসর্গ বিদ্যমান থাকায় তাঁর ছোট ছেলে ও ছেলের বউ তাঁকে বাসায় রাখতে চাননি। চলে যেতে বলেন বাসা থেকে। গত রোববার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
রোববারই ওই বৃদ্ধা নদীপথে আবার চলে যান নারায়ণগঞ্জে বড় ছেলের বাসায়। এরপর সেখানে গিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা শেষেও বৃদ্ধার শরীরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। পরে বড় ছেলে ও তাঁর পরিবারও বৃদ্ধা মাকে আর রাখতে চাননি। ফলে ওই বৃদ্ধা পুনরায় গতকাল সকালে ছোট ছেলের বাসায় যান। কিন্তু ছোট ছেলে ও তাঁর স্ত্রী মিলে তাঁকে বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। দেননি বাসায় ঢুকতে।
বাসা থেকে বের হয়ে ওই বৃদ্ধা কান্দারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। ওই বৃদ্ধা স্কুলে যাওয়ার পর থেকে সেদিকেও কেউ যাচ্ছিলেন না। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই খবর জানতে পারেন চিকিৎসকদের ৩৯তম বিসিএসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল হাসনাত। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সেখানে যান। গিয়ে দেখেন বৃদ্ধা স্কুলের সামনের ফাঁকা রাস্তায় বসে ছিলেন।
স্কুলের সামনের ফাঁকা রাস্তা থেকে বৃদ্ধা নারীকে নেওয়া হয় মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাঁকে সেখানে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই পুরো ঘটনা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন ডা. মো. আবুল হাসনাত।
ডা. মো. আবুল হাসনাত বলেন, ‘আপন দুই ছেলের বাসায় একজন বৃদ্ধা মায়ের জায়গা হলো না। ওই বৃদ্ধা নারীর জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল বলেই এই ঝামেলা হয়েছে। অথচ উনি কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হননি। বয়স হয়েছে, তাতে আবার এসব উপসর্গ তাঁর ছেলেদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে। তারপর আমি শুনলাম বৃদ্ধা ছেলের বাড়িতে জায়গা না পেয়ে রাতে একা একা স্কুলে পড়ে আছেন। তারপর আমি সেখানে যাই। গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত শুনি আমি।’
আবুল হাসনাত আরো বলেন, ‘ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগে। সে সময় তাঁর ছোট ছেলেও ছিলেন। কিন্তু তিনি কাঁদতেছিলেন। সে সময় ছোট ছেলে আমাকে জানান, তাঁর মা এলে তাঁকে একটি তরমুজ খেতে দেওয়া হয়। সেই তরমুজ খেয়ে বৃদ্ধার আরো জ্বর বেড়ে যায়। তারপর তাঁকে চলে যেতে বলা হয়। ছেলের দাবি, কেউ চিকিৎসা দিতে চাচ্ছিলেন না। তাই তারা ভয় পেয়েছিলেন। তবে তরমুজের দাবি কতটা সত্য সেটা একটি প্রশ্ন। তবে একপর্যায়ে গিয়ে বৃদ্ধার ছেলেকে দেখেও মনে হচ্ছিল তাঁর খারাপ লাগছিল।’
চিকিৎসক বলেন, ‘আজ দুপুরের দিকে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর ছেলেরা এসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়ে চলে গেছেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন। তবু আমরা বৃদ্ধার নমুনা পাঠাব আইইডিসিআরে। করোনাভাইরাস মানবতা দেখছে না। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকা দরকার যাতে করে নিজে সাবধানে থাকতে গিয়ে যাতে অন্যকে না মেরে ফেলি।’