দাফনের কাজে আল মারকাজুল ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবীরা
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা সন্দেহে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন করা হচ্ছে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে যেখানে স্বজনরাই মরদেহ থেকে দূরে থাকছেন, সেখানে তাদের দাফনের কাজটি করছে আল মারকাজুল ইসলামীর একদল স্বেচ্ছাসেবী। এ ছাড়া দাতব্য হাসপাতাল, মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা করছে সংস্থাটি।
এর মধ্যেই তালতলা কবরস্থানে দেখা গেল এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষ নিয়ে যিনি অন্যের জানাজা পড়িয়েছেন, আজ তাঁর জানাজায় ছয়জন স্বেচ্ছাসেবী ও তিনজন গোরস্থানের লোক। বড় ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে যোগ দিলেন জানাজায়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে বাবার মরদেহ এসেছে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে। আর ছেলে কোনোরকমে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ছুটে এসেছেন তালতলার কবরস্থানে।
দাফনের সময় যে চিত্র সাধারণত দেখা যায়, তার পুরোপুরি ব্যতিক্রম এখানে। করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে পুরো চিত্র। যদিও বয়োজেষ্ঠ্য মানুষটি আদৌ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির বড় ছেলে বললেন, ‘মনে এতটুকুই কষ্ট, তিনি যখন মানুষের জানাজা পড়াতেন, অনেক লোক থাকত। আজ আমার বাবার জানাজায় পাঁচ থেকে ছয়জন।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন আরো অনেকেই। আতঙ্কিত হয়ে যেখানে স্বজনরা কাছেই ভিড়ছে না, সেখানে শরিয়ত সম্মতভাবে মরদেহ সৎকারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন আল মারকাজুল ইসলামীর কর্মীরা। যখনই করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহে কারো মৃত্যু হচ্ছে, মরদেহ দাফনে বেরিয়ে পড়ছেন তাঁরা।
আল মারকাজুল ইসলামীর কাফন-দাফন দলের সদস্য মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিজের স্বার্থে না, জনগণের স্বার্থে আল্লাহ-তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য এ কাজ করতে শুরু করেছি। আমাদের এই টিমকে গঠন করা হয়েছে যেন সুন্দরভাবে জানাজা হয়, সুন্দরভাবে কাফন-দাফন হয়। এ জন্য ওলামায়েকেরামকে নিয়ে একটা টিম গঠন করা হয়েছে, যেটা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি।’
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। নিজ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মরদেহ সৎকার করা যাবে। তবে মরদেহ স্পর্শ করাকে নিরুৎসাহিত করেছে ডব্লিউএইচও।
শুধু করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনই নয়, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানাভাবে মানুষের সেবা করে আসছে আল মারকাজুল ইসলামী।
সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা শহীদুল ইসলাম জানালেন, অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আল মারকাজুল ইসলামী আলহামদুলিল্লাহ এসব কাজে এগিয়ে থাকে। যেহেতু আমাদের এখন সেরকম ফান্ডিং নেই, তাই আমরা ত্রাণ দিতে পারছি না। কিন্তু, এই ফিল্ডে আমরা হেল্প করি, যেখানে কেউ আগাচ্ছে না।’
হামজা শহীদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আল মারকাজুল একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা ৩২ বছর ধরে সেবাই করে আসছি। এখন যে পরিমাণ সাপোর্ট আসছে, এ রকম সাপোর্ট যদি থাকে, আল্লাহর রহমতে আমরা আরো কাজ করতে পারব, ইনশা আল্লাহ।’
বেশ কয়েকটি দাতব্য হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা পরিচালনার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঠোঁট-তালুকাটা অপারেশেন, চোখের চিকিৎসা ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে আসছে আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ।