দাদা-দাদির কবরের পাশে শায়িত ইংরেজি মাধ্যমের সেই স্কুলছাত্রী
কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় নিহত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুরের গোপালপুর কবরস্থানে আজ শনিবার সকালে ওই স্কুলছাত্রীকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে গোপালপুর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তার লাশ ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে আসে। ভোর থেকেই শত শত মানুষ তাকে শেষবার দেখতে ভিড় করে। এ সময় আত্মীয়-স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানাজা ও দাফন শেষে স্কুলছাত্রী নিহতের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। কমলাপুর বাজারে সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধনে স্কুলছাত্রীর বাবা, ছোটো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনেরাও উপস্থিত ছিলেন। সবাই স্কুলছাত্রী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ছাড়া মামলায় ও সুরতহাল রিপোর্টে স্কুলছাত্রীর বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলাবাগানের নিজ বাসা থেকে বন্ধু তানভীর ইফতেফার দিহানের বাসায় যায় সে। পরে গুরুতর অবস্থায় ওই ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন দিহান। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে। এতে তার জননাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর ওই রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
এ ঘটনায় তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আল আমিন আহম্মেদ। কলাবাগান থানা পুলিশ দিহানকে গ্রেপ্তার করেছে। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইহসানুল ফেরদৌস আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসামির মা বাসায় না থাকায় সুযোগ পেয়ে ভুক্তভোগীকে কলাবাগানের ওই ফাঁকা বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। এরপর জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর জননাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।’
এডিসি আরো বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ওই শিক্ষার্থী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে আমরা লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে। আসামিকে এরই মধ্যে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।’
এর আগে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, “আমার ভালো মেয়েকে পরীক্ষার সাজেশন দেওয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে নিল ওর বন্ধুরা। পরে আমাকে ফোন করে বলে, ‘আন্টি আপনার মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছে।’ পরে ওর বন্ধুরা আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আন্টি ও মারা গেছে।’ হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ধারণা, মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বাকিটা তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। আমি এর বিচার চাই। আমার মেয়ের এ বছর ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।’’