‘দর্জি’ মনিরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন নামে সংগঠন দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মো. মনির খান ওরফে দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রাজধানী কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কামরাঙ্গীরচর থানায় এ মামলাটি করা হয়।
রাতে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর চার।’
মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘দর্জি মনির ভুঁইফোঁড় সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি এডিট করে জোড়া দিয়ে তা নিয়েও ভুয়া প্রচার চালিয়ে নিজেকে জাহির করেছেন। এ ছাড়া তিনি ভুয়া সংগঠনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করেছেন বলেও মামলার বাদী ইসলাইল হোসেনের দাবি। মামলার এজারের তিনি এসব অভিযোগ এনেছেন।’
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কেবল মামলা গ্রহণ করেছি। দর্জি মনিরকে আমরা এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করিনি। আমাদের কাছে তাঁকে কেউ হস্তান্তরও করেনি। তিনি কোথায় আছেন, তাও আমি জানি না।’
মো. মনির খান ‘দর্জি মনির’ নামেই সমধিক পরিচিত। নিজের তৈরি করা ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে আছেন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “দর্জি মনির এখন ডিবির হেফাজতে আছেন। তিনি তো একটা টাউট লোক। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের অনুমতি ছাড়া তিনি একটি দোকান (সংগঠন) খুলেছেন। সংগঠনটির নাম হচ্ছে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’। এই সংগঠনের নাম দিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন লোককে কমিটিতে নেওয়া ও বাদ দেওয়ার কাজ করেছেন। শুধু এটা না, তিনি আরও ১০-১৫টি সংগঠন খুলেছেন। তিনি অটিজমের চেয়ারম্যান, রূপসী বাংলার চেয়ারম্যান, ওমুকের চেয়ারম্যান, তমুকের চেয়ারম্যান, হাজারও চেয়ারম্যান; কিন্তু কোনোটার কোনো কাগজপত্র নেই। তাঁর কাছে কিছু প্যাড পেয়েছি। মানে, নানান ধরনের অনিয়ম।’
দর্জি মনির কি আটক করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আটক বলতে কী, তাঁর সঙ্গে আমরা কথা বলছি। তিনি এখন ডিবির হেফাজতে আছেন।’
দর্জি মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবির এমন একটি সূত্র জানিয়েছেন, দর্জি মনির বিয়ে করেছেন তিনটি। এর মধ্যে এক বউ থাকেন কামরাঙ্গীচর। তাঁর কোনো খোঁজ-খবর নেই। চার ছেলে-মেয়ে। তিনি একজন বয়স্ক নার্সকেও বিয়ে করেছেন। বিয়ে করার পরে নার্সের কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি মুজিব কোট, একটি সুন্দর পায়জামা ও আরেকটা নৌকার চেইন বানিয়েছেন। এটা নিয়ে ঘোরেন। এই হলো দর্জি মনিরের পরিচয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতার সঙ্গেই মনির খানের ‘ওঠা-বসার ছবি’ আছে। অভিযোগ আছে, এসব ছবির অধিকাংশই ফটোশপে কারসাজি করে তৈরি করা। যদিও তিনি তাঁর ফেসবুকে দাবি করেছেন, ছবিগুলো সত্যি। ফটোশপ করা হয়নি।
মনির খান জমির দালালি ও তদবির-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। তবে তিনি মনোনয়ন পাননি।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর মতো সংগঠনের সঙ্গে দলটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এ ধরনের ভুঁইফোঁড় সংগঠন চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে ‘চাকরিজীবী লীগের’ নামে সংগঠন দাঁড় করানো এবং জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পরই আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। পরে গত শুক্রবার রাতে তাঁকেও গ্রেপ্তারও করা হয়। এখন তিনি রিমান্ডে রয়েছেন।