ত্বিন ফল চাষে ভাগ্য বদলেছেন দুই ভাই
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাল্টিগোপালপুর গ্রামের দুই ভাই ইমাম হাসান রাহাত ও রাতুল। করোনা পরিস্থিতিতে স্বল্প সময়ে পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ত্বিন ফল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তাঁরা। স্থানীয়দের মধ্যে তাঁরা আলোচিত হয়েছেন মরুভূমির মিষ্টিখ্যাত এই ত্বিনফল চাষ করে। এ ফল চাষে সাফল্য পেয়েছেন তরুণ দুই উদ্যোক্তা।
জানা যায়, তরুণ উদ্যোক্তা ইনাম হাসান রাহাত ও তাঁর বড় ভাই আসিফ হাসান রাতুল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৩০০ চারা দিয়ে ৩৩ শতাংশ জমিতে ত্বিন ফলের আবাদ শুরু করে। রোপণের তিন মাসের মাথায় শুরু হয় ফল সংগ্রহ। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে সাত মাসের মধ্যে লাভের মুখ দেখেছেন তাঁরা। বিষমুক্ত উপায়ে ত্বিন ফল উৎপাদনে বাগানে ব্যবহার করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক। করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার কর্মহীন হয়ে যাওয়া ছয়জন শ্রমিক এ বাগানে নিয়মিত কাজ করছেন। রস, মিষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয় এই ফল বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। গাছে ফল আসার চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে পাকতে শুরু করে। পাকলে লাল, খয়েরি, গোলাপি ও হলুদাভাব রং ধারণ করে।
উদ্যোক্তা ইনাম হাসান রাহাত জানান, সৌদি আরবসহ মরু অঞ্চলে পবিত্র ফল হিসেবে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডুমুর সদৃশ এই ত্বিন ফল যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিসমৃদ্ধ। মুসলিম অধ্যুষিত মরু অঞ্চলে এই ফল পবিত্র হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। এ ফল ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করেন মরু অঞ্চলের মানুষ।
রাহাত আরও বলেন, ‘মরু অঞ্চলের এই ফলের অনেক গল্প শুনেছি। এরপর সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে অল্প কিছু চারা সংগ্রহ করি। পরে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য তাঁর মাধ্যমেই বীজ আনাই। দুই ভাই মিলে নিজেদের শুরু করি ত্বিন চাষ। আমাদের এলাকা বালুময় না হলেও লালমাটি সমৃদ্ধ এলাকা। প্রথমদিকে ভেবেছিলাম হয়তো এখানে এই ফলের চাষ ভালো হবে না। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই ফল বড় হতে থাকে। সেই গাছে ফল আসে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের ডুমুর ফল মনে হলেও এই ফল খেতে বেশ সুস্বাদু। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ফলের গাছ দেখতে। অনেকেই ত্বিন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
রাহাতের বড় ভাই রাতুল বলেন, ‘আমরা ফল বিক্রির পাশাপাশি কাটিংয়ের মাধ্যমে চারাও বিক্রি শুরু করেছি। এরই মধ্যে ফল ও চারা বিক্রি করে বেশ ভালো আয় হয়েছে।’
রাহাত আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাগান তৈরি ও চাষে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতিকেজি ফল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি পিস চারা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’ তবে অপ্রচলিত এ ফলের দেশীয় চাহিদা সৃষ্টি হলে আরও ভালো দাম পাওয়া যাবে। এ জন্য সরকারি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।’
রাহাত জানান, গত মাসে প্রায় ৪০ কেজি ফল বিক্রি করেছেন। এক হাজার টাকা দরে প্রতি কেজি ফল সুপারশপ স্বপ্নসহ অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফজালুল হক জানান, ত্বিন ফল মরু অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। এর ঔষধি গুণও অনেক। এ ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে অনেক অর্থ উপার্জন সম্ভব। যেহেতু এ ফলের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সে কারণে ত্বিন চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘ওই এলাকার মাটি খুবই ভালো। এ ফল চাষ উপযোগী। মিঠাপুকুরের দুই সহোদর ত্বিন চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন, যা আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক উদাহরণ।’