তজুমদ্দিনে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২০
ভোলার তজমুদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের নারী ও শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত এবং আজ রোববার সকালে চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এবং এর আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় এসব তাণ্ডব চলে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিছিল শেষে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. রিয়াদ হোসেন হান্নান ও নৌকার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু তাহের মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়। এ সময় ভাঙচুর করা হয় বর্তমান চেয়ারম্যানের কার্যালয়, জাতীয় পার্টির স্থানীয় কার্যালয়, পাঁচটি দোকান ও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব থেকে বাদ যায়নি হান্নান সমর্থক নারী, পুরুষ ও শিশুরা পর্যন্ত।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই আজ রোববার সকালে পুনরায় মাঝিবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। কামাল, শরীফ ও আলমগীরেরসহ পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়াদ হোসেন হান্নান সমর্থিত সালাউদ্দিন মাঝি, আলী আজগর, মো. মহিউদ্দিন, আলমগীর, কামরুল, এমরানের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত রাজিয়া বেগম ও রহিমা বিবি জানান। তাঁরা বলেন, নৌকার স্লোগান দিয়ে দুই দিক থেকে দুটি মিছিল, লাঠিসোঁটা ও বগি দাসহ (ধারালো অস্ত্র) এসে হামলা চালানো হয়। এ সময় আমরা তাদের হাত-পা ধরেও রক্ষা পাইনি। কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি ভাঙচুর করেছে ঘরবাড়ি। তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি দশম শ্রেণির ছাত্রী সালমাও। ঘরে ঢুকেই তাঁকে টানাহেচড়া করে বাইরে এনে মারধর করা হয়। তার মা রহিমা বিবি ও বাবা আলী আজগর বাধা দিতে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। কুপিয়ে আহত করা হয় বাবা আলী আজগরকে।
এদিকে আহতদের প্রথমে তজুমদ্দিন এবং পরে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে তজুমদ্দিন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় উভয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী একে অপরকে দায়ী করেন।
অপরদিকে আজ সকাল থেকে লালমোহন ও তজুমদ্দিন থেকে শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় শোডাউন করায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
চাঁচড়া ইউপির চেয়ারম্যান রিয়াদ হোসেন হান্নান বলেন, ‘নৌকার সমর্থকেরা মিছিল করে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা ও ব্যাপক মারধর করে। এ ছাড়া বহু ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পিটিয়ে আহত করেছে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ। আমার অফিসটি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। আমি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার দাবি করছি।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হান্নানের ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে। আমার সমর্থকদের পিটিয়ে আহত এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণাকালে হামলাকারী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নানের ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোলা সদর থেকে আরও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হচ্ছে।