ঢাকা সিটি নির্বাচন : প্রচারকালে জনভোগান্তির কথা ভাবা হচ্ছে কি?
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আছে আর সপ্তাহখানেক। শেষ পর্যায়ে এসে ভোটারদের নজর কাড়তে নানা ধরনের কৌশল ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা।
নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে প্রার্থীদের গুণকীর্তন করে প্যারোডি গান বানিয়ে মাইকে বাজানো। কিন্তু অব্যাহত প্রচার ও মাইকের এ ব্যবহার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের জন্য পরিণত হয়েছে উপদ্রব হিসেবে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
প্রচারে অন্যতম সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে শব্দদূষণ। কিন্তু সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী দুপুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে প্রচারে মাইক ব্যবহার করতে পারেন না।
‘প্রচারে গাড়ি, ভ্যান ও রিকশা থেকে দিন-রাত বিরামহীনভাবে উচ্চ স্বরে শব্দ আসছে। এমনকি রাত ১০টার পরও বাজতে থাকে... তাতে এলাকার সবারই সমস্যা হচ্ছে,’ বলেন রামপুরা এলাকার গৃহিণী জিনাত রায়হানা। প্রচারণার উচ্চ শব্দ শিক্ষার্থী ও অসুস্থ বয়স্কদের বেশি ক্ষতি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ঘটনাকে নির্বাচনী আচরণের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) মহাপরিচালক ড. শাহরিয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সব প্রার্থী নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত বিধি লঙ্ঘন করছেন। তাঁরা প্রচারের জন্য হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বা মোটরশোভাযাত্রা করতে পারেন না... এটি দুঃখজনক, কারণ যাঁরা নিয়ম লঙ্ঘন এবং পরিবেশদূষণ করছেন, তাঁরাই শহর পরিচালনায় মূল অংশীজন হবেন।’
সিটি নির্বাচনের আরেক উপদ্রব হলো রাজধানীতে ঝুলিয়ে দেওয়া প্লাস্টিকের মোড়কে থাকা বা লেমিনেটেড পোস্টারের আধিক্য। মেয়র ও কাউন্সির প্রার্থীদের সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, মোট প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার ছাপা হয়েছে। এসব পোস্টারের বেশিরভাগই রাস্তায় ঝুলছে এবং ছিঁড়ে যাওয়াগুলো সড়কে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
হাইকোর্ট গত বুধবার এক আদেশে লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে যে বিপুল সংখ্যক পোস্টার চলে এসেছে, তা পরিবেশের জন্য আসন্ন হুমকি হিসেবেই রয়ে গেছে।
ড. শাহরিয়ার বলেন, লেমিনেটেড পোস্টার শেষ পর্যন্ত পরিবেশকে আক্রান্ত করবে। তিনি উল্লেখ করেন, আদালত নির্বাচনের পর পোস্টার সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
‘এসব পোস্টারের আসলে কী হবে? এগুলো যাবে কোথায়? এগুলো জলাশয়ে ফেলা হবে, যা নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আটকে দেবে,’ বলেন তিনি।
তিনি বিপুল সংখ্যক লেমিনেটেড পোস্টারের কারণে শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং সেখানে মশা জন্ম নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
ড. শাহরিয়ার আরো বলেন, ‘প্রার্থীদের প্রচারে অসতর্ক আচরণ উদ্বেগের। কারণ তাঁরাই তো অবশেষে নগর পরিচালনা করবেন।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবখানে পরিস্থিতি প্রায় একই। প্রতিটি জায়গায় ঝুলছে লেমিনেটেড পোস্টার, আর মাইকে উচ্চ স্বরে চাওয়া হচ্ছে ভোট।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিন বলেন, প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা নিজেদের কাজকে নির্বাচনী উৎসবের দোহাই দিয়ে চালিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এ কাজ অন্যভাবেও করা যেত।
‘রাজনীতিবিদরা পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেন না। তাঁরা প্রচারের জন্য পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করেন,’ জানিয়ে মতিন লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধে হাইকোর্টের আদেশের প্রশংসা করেন। কিন্তু এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
বাপা সাধারণ সম্পাদক জানান, তাঁদের সংগঠন রাজনীতিবিদদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করতে শিগগরিই প্রচারণা শুরু করবে।
মতিন মনে করেন, রাজনীতিবিদরা একটি খারাপ ধারা চালু করেছেন। তা হয়তো ভবিষ্যৎ নির্বাচনেও চলতে পারে। তিনি বলেন, ‘যা পরিবেশের ক্ষতি, পানি নিষ্কাশন বন্ধ ও জনগণের শান্তিভঙ্গ করতে পারে, তেমন কোনো প্রচার আপনি চালাতে পারেন না। আমরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছি, যা প্রচারণাকারীরা বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করলে সহজেই এড়ানো যেত।’