ঢাকা ভোটের ‘অনিয়ম’ নিয়ে মামলায় যাচ্ছে বিএনপি
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে’ মামলা করতে যাচ্ছে বিএনপি।
আগামী রোববার ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটির মেয়র পদপ্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মামলা করতে ট্রাইব্যুনালে যাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
দুই প্রার্থীই জানিয়েছেন, এরই মধ্যে মামলা সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মামলার বিষয়টি এমন সময়ে এলো, যখন আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচিত দুই মেয়র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকালে শপথ নেবেন। তাদের সঙ্গে দুই সিটির কাউন্সিলররাও শপথ নেবেন। দুই মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট হয়। দুটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীরা জয় পায়। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হওয়া ভোটে ভোটারদের সাড়া ছিল নগণ্য। দুই সিটিতে মাত্র ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম পান চার লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষে পেয়েছেন দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। আতিকুল এক লাখ ৮৩ হাজার ৫০ ভোটে তাবিথকে পরাজিত করেছেন।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক হাজার ১৫০ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পান চার লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
‘ডিজিটাল কারচুপির’ অভিযোগ এনে ভোটের এই ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ভোটের পরের দিন অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। এখন মামলার দিকে যাচ্ছে দলটি।
এ নিয়ে তাবিথ আউয়াল আজ বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভোটের সামগ্রিক ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়ে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের নামে সারা ঢাকায় প্রহসন হয়েছে। ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখল করে ইচ্ছেমতো নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ইভিএমেও কারচুপি হয়েছে। আমরা নির্বাচনী প্রহসনের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। রোববার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে।’
ধানের শীষের এই প্রার্থী আরো বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, অনিয়ম ও কারচুপি নিয়ে যেসব তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে তা আমরা আদালতে উপস্থাপন করব। আদালত নিরপেক্ষভাবে সবকিছু বিশ্লেষণ করলে আশা করি, ভোটের ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের আদেশ দেবেন।’
দক্ষিণ সিটির প্রার্থী ইশরাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। উত্তর-দক্ষিণ একসঙ্গেই মামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
এর আগে নির্বাচন পরবর্তী অনুষ্ঠানে ভোটে অনিয়ম, কারচুপির তথ্য-প্রমাণাদি বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন তাবিথ-ইশরাক।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ কোনো প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি চাইলে ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে’ আবেদন করতে পারবেন।
ঢাকার দুই সিটির ভোটের পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ক্ষেত্রে কোনো সংক্ষুব্ধ প্রার্থী ২ মার্চ পর্যন্ত সময় পাবেন। মামলা করার পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।
রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট না হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তিনি চাইলে ‘নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে’ যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবেন ‘নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল’।