ডিঙাপোতা হাওরবাসীর ফসল রক্ষায় হাইজদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রায় শেষ
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী বেড়িবাঁধ। ডিঙাপোতা হাওরবাসীর ফসল রক্ষায় এই হাইজদা বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এতে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে মোহনগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল।
এলাকাবাসী জানায়, জেলার মোহনগঞ্জে ডিঙাপোতা হাওরের অস্থায়ী মাটির বাঁধ প্রায় প্রতি বছরই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেঙে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরের হাটনাইয়া, মাঘান, ভাটিয়া, নারাইচ, মল্লিকপুর, চেছরাখালী (আদর্শনগর), নলজুরী, পালগাঁও, রানাহিজল, গাগলাজুর, পাবইসহ আশপাশের কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের বোরো ফসল। এতে বছরের একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কপাল পুড়ে এলাকার হাজারো কৃষকের। এলাকার কৃষকরা সারা বছর অর্থকষ্টে ভোগে। এলাকাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডিঙাপোতা হাওরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
২০১৭ সালে ডিঙাপোতা হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে মোহনগঞ্জের কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমির ১৫২ কোটি টাকার ধান সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। এরপর হাওরের ফসল রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও বিমান বাংলাদেশ পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ সফরে এসে এ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হচ্ছে ব্লক বসিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ। এবার বেড়িবাঁধ স্থায়ীকরণে উপরিভাগসহ উভয় পাশে সিসি ব্লক (পাথর, সিমেন্ট) বসিয়ে মোড়ানো হয়েছে। এতে হাওরের একমাত্র বোরো ফসলডুবির আর শঙ্কা থাকবে না।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা হাওরের ফসল রক্ষার জন্য চর হাইজদা ডুবন্ত বাঁধ হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার। এরমধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার। এসব কাজের ১১টি প্যাকেজের মধ্যে সাতটি কাজ করছে যৌথভাবে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
ডিঙাপোতা হাওরের গাগলাজুর, মাঘান, সিয়াদার, হাইজদা বাঁধ এলাকা সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা ব্লক বসিয়ে কাজ করছে। ফসলের মাঠ থেকে বাঁধ অনেকটা উঁচু। আবার কোনো কোনো জায়গায় হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কালভার্ট করে দেওয়া হয়েছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, হাইজদা বাঁধের পুরো অংশ স্থায়ীকরণ করা হলে ডিঙাপোতা হাওরের ফসল উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে নষ্ট হবে না।
মোহনগঞ্জের নলজুরী গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, এই বাঁধ হওয়ায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। এখন আর সহজে বোরো ফসল পানিতে ডুবে যাবে না। সরকার আমাদের দাবি পূরণ করেছে। আমরা এলাকাবাসী সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
মাঘান গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন,বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। এখন আর আমাদের কষ্টার্জিত একমাত্র ফসল নষ্ট হবে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় অকাল বন্যার হাত থেকে আমাদের এলাকার ফসল রক্ষা পাবে। সারা বছর আমাদের সংসার চালাতে আর কোনো কষ্ট হবে না।
মান্দারবাড়ি গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, হাওরের বাঁধ ভাঙার ফলে জীবন শেষ। এখন স্থায়ী বাঁধ হওয়ায় আর ফসলহানির আশঙ্কা থাকবে না। তাই এ বাঁধ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। এটাই এখন হাওরের কৃষকদের পরম পাওয়া।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, হাইজদা বেড়িবাঁধের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার শক্তিশালী ও স্থায়ীকরণে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। এ বাঁধ প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি ১২-১৪ দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ডিঙাপোতা হাওরের একমাত্র বোরো ফসল উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পাবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, হাওর এলাকার কৃষকদের উপকারের জন্য সরকার বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে হাইজদা বাঁধ অন্যতম। ওই বাঁধ নির্মাণের ফলে হাওরের ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এলাকার কৃষকরা ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে।