ডা. সাবরীনা বরখাস্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে শোকজ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাবরীনা আরিফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা এবং অর্থ আত্মসাতের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ রোববার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডা. সাবরীনার বরখাস্তের বিষয়টি আজ থেকেই কার্যকর হবে।
অপরদিকে ‘রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই চিঠির বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে শোকজ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে কী বোঝানো হয়েছে এবং রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক ডা. সাবরীনা আরিফকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি সরকারি চাকুরে হওয়া সত্ত্বেও অনুমতি না নিয়েই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (জেকেজি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তা ছাড়া করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব কারণে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ডা. সাবরীনা জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন। তাঁকে আজ বিকেলে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সাবরীনাকে আগামীকাল সোমবার আদালতে নেওয়া হবে। পুলিশ রিমান্ড আবেদন করবে। জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ঘটনায় আর কে কে জড়িত রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।
হারুন অর রশিদ আরো বলেন, এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের সবাই বলেছেন সাবরীনাই জেকেজির চেয়ারম্যান। তা ছাড়া তেজগাঁও কলেজে জেকেজির বুথে হামলার অভিযোগ উঠলে সাবরীনাই প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেন। অভিযানের একদিন আগে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কখনোই কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
জেকেজির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে ডা. সাবরীনা তার দায় এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন হারুন অর রশিদ। এত দিন পর কেন গ্রেপ্তার করা হলো জানতে চাইলে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
এর আগে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাসানাত খন্দকার এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘করোনা পরীক্ষার কথা বলে ভুক্তভোগী রোগীর সঙ্গে প্রতারণার দায়ে ওভাল গ্রুপের মালিক আরিফ চৌধুরীসহ মোট ছয়জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা প্রজেক্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। এই নমুনা সংগ্রহের পর তা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত না। পরীক্ষা না করেই নিজেদের কম্পিউটার দিয়ে করোনার রিপোর্ট বানাত। এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছিল। পরে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করি। তারা করোনা রোগীদের সঙ্গে দুই মাস ধরে এই প্রতারণা করছে।’
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আরিফ চৌধুরীর দাবি, তেজগাঁও কলেজে তাদের একটি করোনার বুথ রয়েছে। ওই বুথ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত। সেখানে তারা নমুনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এটার আদলে তারা জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা প্রজেক্টের নামে একটি পেজ খুলেছিল ফেসবুকে। সেখানে ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। ওই পেজ থেকে যেসব কল আসত, তাদের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করত। যাদের নমুনা সংগ্রহ করত, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রতি রিপোর্টের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নিত ১০০ ডলার। অথচ কারো নমুনা পরীক্ষা না করেই তারা ইচ্ছেমতো নেগেটিভ-পজিটিভ বসিয়ে রিপোর্ট দিত।’
হাসানাত খন্দকার আরো বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারের সময় তিন হাজার করোনা কিট, ৪০টি ভুয়া করোনার সনদ এবং তাদের কাছে থাকা চারটি ল্যাপটপ ও দুটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ওই দিন মামলা করে।