ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্যকর নতুন ইনসুলিন
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর এনেছে ডেনমার্কের বহুজাতিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নভো নরডিস্ক। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাংলাদেশে এনেছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর ইনসুলিন। এর আগের ইনসুলিনগুলোর তুলনায় এটি আরো বেশি কার্যকর হবে বলে দাবি করা হয়েছে।
এ দেশে ইনসুলিনটির বাজারজাতকরণ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে জানানো হয়, টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস উভয় রোগীদের জন্য ইনসুলিনটি ব্যবহার করা যাবে। প্রচলিত দ্রুত কার্যকরী আধুনিক ইনসুলিনের চাইতে দ্বিগুণ দ্রুত এবং দ্রুত কার্যকরী হিউম্যান ইনসুলিনের চাইতে চারগুণ দ্রুত কাজ করবে নতুন এই ইনসুলিন। এ ছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিসসহ যেসব মায় শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ইনসুলেনটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আগামীকাল থেকেই ‘ফাস্টেস্ট অ্যাকটিং ইনসুলিন’টি বাজারে পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, খাওয়ার পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যায় পড়েন ডায়াবেটিস রোগীরা। এর ফলে, ডায়াবেটিসজনিত নানা জটিলতাও দেখা দেয়। নতুন এই ইনসুলিনটি দিয়ে রোগীরা উপকৃত হবেন। কারণ এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়) কমিয়ে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৮৫ লাখ। তার মধ্যে ৫০ লাখ রোগী বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নিবন্ধনকৃত। ২০৪৫ সালে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে দ্বিগুণ। তিনি বলেন, প্রতি চার সেকেন্ডে একজন লোক ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে। এবং প্রতি পাঁচ মিনিটে একজন ডায়াবেটিসজনিত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শতকরা ৯০ ভাগ লোকের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন বলেন, ‘আমি জেনে আনন্দিত যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নভিত্তিক ইনসুলিন উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে নভো নরডিস্ক। আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে নভো নরডিস্কের ইনসুলিন উৎপাদন একটি বড় মাইলফলক। ডেনমার্ক ১৯২৩ সাল থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৫৮ সাল থেকে এ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে থাকবে ডেনমার্ক। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, উন্নতমানের ইনসুলিন সরবরাহ করা; যা স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা ও বাধা অতিক্রম করতে সহায়ক হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, গুঁড়া দুধের পর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ইনসুলিন। ইনসুলিনের এ রপ্তানিতে নভো নরডিস্ক অনেক দিন থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
১৯২১ সালে প্রথম কৃত্রিম ইনসুলিন আবিষ্কৃত হয়। এরপর কলমের মাধ্যমে ইনসুলিনের ব্যবহারকে মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে। এই ইনসুলিন প্রতিবার খাবারের আধা ঘণ্টা আগে নেওয়া হয়। কিন্তু এখন বাজারে ‘লং লাস্টিং’ ইনসুলিন আছে। এই ইনসুলিন ৪০ ঘণ্টায় একবার ব্যবহার করতে হয়। বাংলাদেশের বাজারেও এই ‘লং লাস্টিং’ ইনসুলিন পাওয়া যাচ্ছে।
বাডাসের সাধারণ সম্পাদক মো. সায়েফ উদ্দিন বলেন, বাডাসের ডায়েবেটিস প্রতিরোধ নীতির আলোকে, গবেষণাভিত্তিক ইনসুলিন আবিষ্কারের পাশাপশি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করে যাচ্ছে।
নভো নরডিস্ক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মিখাইল ব্রিসিউ বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে রোগীদের জন্য নতুন নতুন ইনসুলিন উদ্ভাবনে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে নভো নরডিস্ক।
২০১২ সাল থেকেই নভো নরডিস্কের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশে হিউম্যান ইনসুলিন উৎপাদন করছে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস। ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নভো নরডিস্কের একমাত্র পরিবেশক।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নভো নরডিস্কের হেড অব মেডিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটি ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানর. হেড আব কমার্শিয়াল অ্যাফের্য়াস মো. তানবির সজীব, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার গাজী তাওহীদ আহমেদ এবং গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার মেজবাউল গাফফার।