ট্রলারডুবিতে নিহত : চরফ্যাশনে ১০ জেলেপরিবারে আহাজারি
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলায় ট্রলারডুবিতে নিহত ১০ জেলেপরিবারে চলছে শোকের মাতম। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা ট্রলারমালিক তোফায়েল মাঝির বিচার চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত নিহত জেলেপরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার চাঁদপুরে মাছ বিক্রি শেষে ২৪ জন জেলে নিয়ে চরফ্যাশনের উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রলারটি। দুপুরের দিকে ট্রলারটি মেঘনা নদীর ভোলা-বরিশাল সীমান্তবর্তী এলাকা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার রুকুন্দী পয়েন্টে এলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রবল স্রোতে ডুবে যায়।
পরে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের সদস্যরা খবর পেয়ে মাঝিসহ ১০ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে। সন্ধ্যার দিকে মোরশেদ নামের এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। কিন্তু ট্রলারে থাকা বাকি ১৩ জেলের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের কয়েকটি টিম মেঘনা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যায়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর নদীতে ভাটার সময় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করলে ট্রলারের কেবিনের মধ্যে নয়জন জেলের মরদেহ পাওয়া যায়।
দুর্ঘটনায় নিহত মো. মফিজ ও কামাল দালালের মা নূর জাহান ও বিবি হাজেরা বলেন, মফিজ ও কামাল গত ৩১ অক্টোবর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের তোফায়েল মাঝির সঙ্গে সাগরে মাছ ধরতে যায়। ৯ দিন সাগরে মাছ ধরার পর গত শুক্রবার ফিরে এসে বরিশালে মাছ বিক্রি করতে যায় তারা। সেখানে মাছের দাম কম হওয়ায় তোফায়েল মাঝি তাদের চাঁদপুরে নিয়ে যায়।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে অনেক জেলেই ট্রলারে যেতে চায়নি। তারপরও তোফায়েল মাঝির চাপে তারা চাঁদপুর যেতে বাধ্য হয়। শনিবার মাছ বিক্রি শেষে তোফায়েল তাদের নিয়ে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেতের মধ্যেই চরফ্যাশনের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জেলেরা পরিবারের সদস্যদের ফোন করে রওনা দেওয়ার কথা জানালে তারা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ট্রলার ছাড়তে নিষেধ করে। কিন্তু তোফায়েল মাঝি কারো কথা না শুনে এক প্রকার জোর করেই ট্রলার ছেড়ে দেয়।
এরপর রোববার দুপুর ১২টার দিকে ট্রলারটি ভোলার সীমান্তবর্তী এলাকার মেঘনা নদীতে ২৪ জেলেকে নিয়ে ডুবে যায়।
ডুবে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া নয় জেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানাধীন বিভিন্ন ইউনিয়নে মৃতদেহ দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ট্রলারের মালিক তোফায়েল মাঝিকে দায়ী করে। স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতে জেলেদের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর সকালে ট্রলারের মালিক তোফায়েল মাঝি লাশগুলো জেলেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আর কোনো খবর নেননি। তাদের পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যও আসেনি তাঁর কোনো লোকজন।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণ ও তোফায়েল মাঝির শাস্তি দাবি করেছে। ঘটনার পর থেকে ট্রলারের মালিক তোফায়েল মাঝি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে নিহত ১০ জেলের পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিহত জেলেদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক।