টিকার দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পর
দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৬ জনকে টিকা দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন তাঁদের বলা হয়েছিল, চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
কিন্তু আগের সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা আজ সোমবার রাতে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
কেন এই সিদ্ধান্ত বদল, এমন প্রশ্নে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আমাদের বলা হয়েছে, প্রথম টিকা নেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দিতে। সেজন্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত।’
নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশনা নিয়ে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে দেশে আজ সোমবার পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ সাত লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪ জন, নারী তিন লাখ ৫৯ হাজার ৮৭ জন। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪৫৫ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সরকার নয় দিন ধরে গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর আগেও দুই দিন সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধাসহ সমাজের বিশিষ্টজনদের টিকা দেওয়া হয়।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। রোববার টিকা নিয়েছিলেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৩ জন। আজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন আর নারী ৭৯ হাজার ৫২৩ জন।
সোমবার রাজধানীর ৪৬টি টিকাদান কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৫৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০২ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭৬ জন পুরুষ ও ৪৭ হাজার ২৬ জন নারী রয়েছেন।
সোমবার ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ৬২ হাজার ৭৩৩ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪২ হাজার ১১৪ জন ও নারী ২০ হাজার ৬১৯ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় টিকা নিয়েছেন নয় হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচ হাজার ৮৫৬ জন ও নারী তিন হাজার ৫৯৯ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় টিকা নিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪ হাজার ২৬২ জন ও নারী ১৮ হাজার ৪৮২ জন।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ২৪৭ জন ও নারী আট হাজার ৮১৩ জন।
রংপুর বিভাগের আট জেলায় টিকা নিয়েছেন ২১ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৫৭৩ জন ও নারী আট হাজার ৪৫ জন।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় টিকা নিয়েছেন ২৭ হাজার ৭১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৮৬৬ জন ও নারী নয় হাজার ৮৪৪ জন।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট হাজার ১৮৬ জন ও নারী তিন হাজার ৯৪৫ জন।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় টিকা নিয়েছেন ১৬ হাজার ২২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৫১ জন ও নারী ছয় হাজার ১৭৬ জন।
এর আগে, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৭ জানুয়ারি দেশের ২৬ জনের মধ্যে টিকা প্রয়োগ করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরুর জন্য বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৭০ লাখ ডোজ আনা হয়েছিল। সেখান থেকে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকা নিতে চাইলে www.surokkha.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
ভারতের উপহার হিসেবে সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। এরপর ২৫ জানুয়ারি সিরাম থেকে বাংলাদেশের কেনা কোভিশিল্ডের প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ নিরাপদে ঢাকায় আসে।