টাকা না থাকায় সৌদিপ্রবাসীরা ঘুমালেন রাস্তায়!
সৌদি আরবে ১৩-১৪ বছর ধরে থাকেন তাঁরা পাঁচজন। সবার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠীর রাজাপুর উপজেলায়। গত রোববার তাঁরা পাঁচজনই একসঙ্গে লঞ্চে করে ঢাকায় আসেন। এই পাঁচজনই এসেছেন কর্মস্থলে ফেরার জন্য ফিরতি টিকেটের আশায়। সেই থেকেই আছেন কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের সামনে।
তাঁরা ভেবেছিলেন, টিকেটের ব্যবস্থা করে রোববার রাতে পুনরায় ফিরে যাবেন বরিশালে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা তাঁরা আর করতে পারেননি। কর্তৃপক্ষও তাঁদের টিকেটের ব্যাপারে কোনো যথাযথ উত্তর দিতে পারেনি।
ঢাকায় পাঁচজনের কারোর আত্মীয় কিংবা থাকার মতো কোনো পরিচিতজন নেই। বাড়ি থেকেই লঞ্চে বিশ্রামের জন্য তাঁরা বিছানা নিয়ে এসেছিলেন। রোববারের রাতটি তাঁরা কাটিয়ে দেন সোনারগাঁও হোটেলের সামনের ফুটপাতে ওই বিছানা বিছিয়ে। এভাবে সোমবার এবং মঙ্গলবারের রাতও তাঁরা রাস্তায় কাটিয়ে দেন। শুধু এই পাঁচজন নয়, একই অবস্থায় ছিলেন আরো অনেকে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এনটিভি অনলাইনকে এসব জানায় ওই পাঁচ সৌদিপ্রবাসী।
ওই পাঁচজনের একজন আবুল কালাম। তিনি ১৩ বছর ধরে সৌদিতে থাকেন। তিন মাসের ছুটিতে আবুল কালাম দেশে ফেরেন চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি। পুনরায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ২ জুন। কিন্তু এর ভেতরে করোনাভাইরাসের জন্য সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিলে তিনি আর যেতে পারেননি।
আবুল কালাম বলেন, ‘আমি, বাচ্চু হাওলাদার, ইসমাইল হাওলাদার, সিদ্দিক খান ও আবুল কালাম একসঙ্গে ঢাকায় এসেছি। সেই রোববার থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত আমরা এই রাস্তার ফুটপাতেই ছিলাম। আমাদের থাকার কোনো জায়গা ছিল না ঢাকায়। আবার কাছে হোটেলে থাকার মতো টাকাও ছিল না। এমনিতেই গত কয়েকমাস ধার করে চলছি। তাই আমরা সবাই রাস্তায় রাত কাটিয়ে দিলাম। আজ বুধবার আমরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বলা হল, আগামী সোমবারের আগ পর্যন্ত কিছু হবে না। তাই আজ বাড়ি ফিরে যাব। সোমবারে আবার আসব ঢাকায়। শুধু আমরা নয়, আরো অনেকেই সারারাত রাস্তায় ছিলেন। কেউ বসে ছিলেন, কেউ ঘুমিয়েছিলেন।’
বাচ্চু হাওলাদার বলেন, ‘রোববার থেকে আজ পর্যন্ত মোট চারদিন আমরা পাঁচজনই এক কাপড়ে আছি। গোসল করারও সুযোগ পাইনি। রাতে ফুটপাতে ঘুমিয়েছিলাম, হঠাৎ বৃষ্টি এলো। ঘুম থেকে উঠে দৌড় দিয়ে নিজেকে বাঁচালাম। খাওয়া-দাওয়ারও ঠিক নেই। সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের অংশে একটা ভাতের দোকান আছে সেখানে আজ দুপুরে খেয়েছি। রাতে এবং দুপুরে দুবারই কলা-রুটি খেয়ে থেকেছি আমরা। ওখানে আরো কয়েকজন ছিলেন, যারাও আমাদের মতো শুয়ে-বসে ছিলেন। মানুষের কি যে কষ্ট, দেখা যায় না। অথচ, আমাদেরকেই বলা হয়, আমরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এই দেশ আমাকে কী দিল?’