ঝালকাঠিতে টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড়, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব
ঝালকাঠিতে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে ডিলারদের দোকানে ভিড় লেগেই আছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ডাল, চিনি, ছোলা ও তেল কিনছে সাধারণ মানুষ। তবে এসব পণ্য কিনতে তারা সামাজিক দূরত্ব মানছে না। লাইনে গাদাগাদি করে তারা পণ্য কিনছে। ডিলাররাও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে মালামাল তুলে দিতে।
জানা যায়, ঝালকাঠিতে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য আটজন ডিলারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাদের পণ্য দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে শহরে তিনজন ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন। এদের মধ্যে একজন শহরের আড়ৎদারপট্টি, স্টেশন রোড ও চাঁদকাঠি এলাকায় ডাল, ছোলা, চিনি ও তেল বিক্রি করছেন। তিনজন ডিলারের দোকানেই উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনছে। তেলের লিটার ৮০ টাকা ছাড়া অন্যসব পণ্য ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টিসিবিতে।
আজ শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়ৎদারপট্টিতে দুপুরের পর থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শত শত মানুষ। অনেকের মুখে সাধারণ মাস্ক পরা থাকলেও অনেকেই অনিরাপদে কিনছে পণ্য। গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে পণ্যের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে অনেকের সঙ্গে ঝগড়াও লেগে যাচ্ছে। সামনে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। যারা টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছে, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
বিকেলে চাঁদকাঠি ও স্টেশন রোডে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। অনেক সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেও পারছেন না। যতক্ষণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি থাকে ততক্ষণ লাইন ঠিক থাকে। তাঁরা চলে গেলে আবার হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়ে যায়।
শহরের নতুন কলাবাগান এলাকার দিনমজুর সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘আমাগো সব কাম-কাইজ বন্ধ অইয়্যা গ্যাছে। খামু কি, ঘরে কোনো খাবার নাই। সামনে রোজা আইছে, ছোলা, চিনি ও তেল কিনতে আইছি। লাইনে দাঁড়াইছি, কখন কিনতে পারমু জানি না।’
গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন কেন জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, ‘আমাগের কিছু অইবে না, আল্লায় রক্ষা করবে।’
আড়ৎদারপট্টি এলাকায় মাস্ক না পরে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘মাস্ক লাগে না। লাইনে দাঁড়াইয়্যা থাকলে ঘামাইয়্যা যায়। মাস্ক পরলে শ্বাস বন্ধ হইয়্যা যাইবে।’
এ ব্যাপারে আড়ৎদারপট্টির টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল বলেন, ‘আমরা পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদের লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেই। এমনকি দূরত্ব বজায় না রাখলে, পণ্য দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিছুক্ষণ ঠিক থাকলেও আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে।’
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি আহমেদ হাসান বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। টিসিবির পণ্য বিক্রি এলাকায় যতক্ষণ আমাদের গাড়ি থাকে, ততক্ষণ সবাই শৃঙ্খলা বজায় রেখে মালামাল ক্রয় করে। গরিব মানুষ এখানে পণ্য কিনতে আসছে, কিন্তু তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বুঝছে না।’