জাল দলিলে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখল, আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জে এক সংখ্যালঘু পরিবারের জীবিত সদস্যদের মৃত দেখিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে ও জাল দলিলে সম্পত্তি দখলের অভিযোগে আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন এবং ইউপি সদস্য ফজলুল হক শামীম।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতাউর রহমান জানান, ২০১৭ সালে দলিল জালিয়াতির মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে সায়েস্তা ইউপির চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন ও ইউপি সদস্য ফজলুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার বিকেলে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বরাতে জানা গেছে, ভুক্তভোগী অদিতি রায় মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৩ নম্বর আদালতে ২০১৭ সালের ১১ মে মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সায়েস্তা ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চাকলাদার, চেয়ারম্যানের ছেলে তুহিন চাকলাদার, ইউপি সদস্য মুনছের আলী, আবদুল মান্নান ও ফজলুল হক শামীম, ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুরের বাসিন্দা আবদুল খালেক, মোসলেমাবাদের বাসিন্দা নাজমুল, দক্ষিণ চারিগ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসেন ও সাহরাইলের বাসিন্দা গোপাল সাহাকে। এ ছাড়া সিংগাইর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদকেও আসামি করা হয়েছিল জাল দলিল তৈরি করার অভিযোগে। প্রথমে থানায় এবং পরে মামলাটি হস্তান্তর করা হয় সিআইডিতে। দীর্ঘদিন মামলাটি তদন্তের পর মামলার সত্যতা পেয়ে দায়িত্বে থাকা সিআইডি আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
মামলার বাদী অদিতি রায়ের অভিযোগ, তাঁর বাবা অমিত কুমার রায় জীবিত আছেন। সিংগাইরের সায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে তাঁর বাবার নামে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমির মধ্যে ৬ শতাংশ সায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদ দখল করে রেখেছে। বাকি ৬ শতাংশ জমি ১৯৯৮ সালে সমশের নামের এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। জমিটির বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় নজর পড়ে ইউপি চেয়ারম্যানের। চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চাকলাদার তাঁর বাবাকে মৃত দেখিয়ে বাবার নাম অমিত নাথ রায় উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় অজিত নাথ রায় নামের একজনকে তাঁর ভাই বানিয়ে ওয়ারিশান সনদ দেন। ওই ওয়ারিশানের বলে অজিত নাথকে দাতা সাজিয়ে সিংগাইর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চেয়ারম্যান তাঁর ছেলে তুহিন ও ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান, ফজলুল হক ওই জমি সাফ-কবলায় দলিল করে নামজারি ও জমি ভাগ করে নেন। এর পর তাঁদের ভাড়াটিয়া মুদি দোকানদার মো. সমশের আলীকে উচ্ছেদ করে সম্পত্তি জবরদখল করেন। অথচ অজিত নাথ রায় বলে তাঁর বাবার কোনো ভাই কিংবা ওয়ারিশান নেই। এমনকি অজিত নাথ রায় নামে যাকে ভুয়া দাতা বানানো হয়েছে, তাঁর ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াই সাব-রেজিস্ট্রার তাড়াহুড়া করে তাঁদের নামে দলিল তৈরি করে দেন।