‘জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়’
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্যাহ চৌধুরী হত্যা মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, মামলার ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্যাহ চৌধুরী এলাকার একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন এবং বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন। পরে তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি এলাকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
বিচারক আরো বলেন, আতিক উল্যাহ ছিলেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার প্রিয় চেয়ারম্যান। তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডে সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামি গুলজার হোসেন মেম্বারসহ অন্যরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। এজন্য আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন আদালত। আসামিদের এই হীন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশ হারাল একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
এদিকে রায়ের পরে সরকারি কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ মিঞা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমি মনে করি, রাষ্ট্রের যেকোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার ন্যায়বিচার হওয়াটা খুব জরুরি।’
পিপি বলেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন গুলজার হোসেন, আসিফ, শিহাব আহম্মেদ ওরফে শিবু, আহসানুল কবির ইমন, তাজুল ইসলাম তানু, জাহাঙ্গীর খাঁ ওরফে জাহাঙ্গীর ও রফিকুল ইসলাম ওরফে আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, রায়ে বিচারক আতিক উল্যাহকে খুনের পর লাশ গুমের দায়ে এ সাতজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানা অনাদায়ে তাঁদের আরো এক বছরের সশ্রম কারাভোগের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শম্পা নামের এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জাহাঙ্গীর খাঁ ও আহসানুল কবির ইমন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপর পাঁচ আসামি পলাতক আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর থেকে দণ্ড কার্যকর করা হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান আতিক উল্যাহ চৌধুরী নিখোঁজ হন। এর পরের দিন ১১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকায় তাঁর আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধারের পরে এটিএম কার্ড দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান ফারুক চৌধুরী।
এ ঘটনায় সাইদুর রহমান ফারুক চৌধুরী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে আটজনের বিরুদ্ধে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।