ছয় মাসের শিশুকে কোলে নিয়েই সবজি বিক্রি করতে হয় মাকে
মাত্র ছয় মাস বয়সী শিশু শহিদুল ইসলাম দিনভর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মা জাহেদা বেগমের (৩৫) সঙ্গে থাকে। সঙ্গে থাকে সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসও। দুই সন্তানকে নিয়ে জাহেদা সকাল ৮টা থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত সবজি বিক্রি করেন। এটা প্রতিদিনের চিত্র।
গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জাহেদা বেগম সবজি বিক্রি করছেন। কোলে বসে আছে শহিদুল ইসলাম। পাশে বসে আছে জান্নাতুলও।
সাত বছর ধরে জাহেদা বেগম কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন। নিজের ব্যবসা তাঁর। পাইকারি বাজার থেকে কিনে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করা, সবই তিনি একাই করেন। ছেলেমেয়ের শরীর খুব খারাপ না থাকলে তরকারি বিক্রি বন্ধ করেন না। থাকেন মগবাজারের পেয়ারাবাগের একটি ছোট্ট বাসায়। এসব কথা এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন জাহেদা বেগম।
জাহেদা বেগম বলেন, ‘এই সবজি বিক্রি করতে করতে আমার মেয়ে হলো। সবজি বিক্রি করতে করতে এরা বড়ও হচ্ছে। বাড়িতে রেখে আসার মতো আর কেউ নেই। এখন ছোটটা সব সময় কোলে থাকে। ছয় মাস আগে মেয়েই থাকত সব সময় কোলে। এরা দুই ভাইবোন এই কারওয়ান বাজারেই বড় হচ্ছে।’
জাহেদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আলাল হোসেন (৪০) মাছ বাজারে মুঠির কাজ করেন। তিনি সব সময় কাজে থাকেন। আগে বেশি বেশি কাজ না করলেও চলত। আর এখন দুই ছেলেমেয়ের পেছনে অনেক খরচ। বাসা ভাড়া দিতে হয় সাত হাজার টাকা। সংসারের আরো অনেক খরচ। দুজনই কাজ না করলে চলতে পারি না।’
আজ নারী দিবস। তবে এই কথা জাহেদা বেগম জানেন না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিয়ের আবার নারী দিবস? এসব দিয়ে কী হবে? কাজ করলে টাকা পাব। না করলে পাব না। তাই কাজ করি দিন-রাত। কাজ করছি, খাচ্ছি আর বাচ্চা-কাচ্চা মানুষ করছি।’
শুধু জাহেদা বেগম নয়, পুরো কারওয়ান বাজারেই অন্তত ৫০ জন নারী শ্রমিককে বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ করতে দেখা গেছে। এদের ভেতরে অন্তত ১৫ জনকে শুধু শাকসবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদের ভেতরে একজন আসমা বেগম (৪০)। তিনি ১৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারেই শাকসবজি বিক্রির ব্যবসা করেন। স্বামী নেই, আছে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সাবিনা আক্তার (১৪) পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে রোজিনা আক্তার (১১) পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। মগবাজারের একটি বাসার এক কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন দুই মেয়েকে নিয়ে। কাকরাইল স্কুলে পড়ে দুই মেয়েই।
আসমা বেগম নারী দিবসের কথা শুনেছেন, কিন্তু ওই দিন কখনো বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ হয়নি তাঁর। তিনি বলেন, ‘স্বামী মরে যাওয়ার পর থেকে আর কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ পাইনি। দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে সব সময় খাটি (পরিশ্রম)। এই ছাড়া কোনো পথ নেই। স্বামী যখন ছিল, তখনো কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করতাম। কিন্তু অসুস্থ হলে বা ভালো না লাগলে কাজ করতাম না। আর এখন, মরো বাঁচো কাজ করো।’