ছবিতে থাকা নারী দিয়েছেন মুচলেকা, মামলা করেছেন অন্য নারী
চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে নগ্ন হওয়া সাজ্জাদ হোসেন বাবলু (১৮) ভাইরাল হওয়া ছবিতে থাকা নারীকে (৩৬) কোনো হুমকি দেননি। তিনি প্যান্ট খুলে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন প্রতিবেশী অন্য নারীকে (৪৬)। সে সময় ওই নারী তাঁর স্বামীসহ নিচ তলার ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা-বার্তা বলছিলেন। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ছবিতে তাদের কারো চেহারা আসেনি।
এতে ঘটনার দর্শক হিসেবে হুট করে সেখানে থাকা প্রতিবেশী আরেক নারী ভাইরাল হয়ে গেছেন। ঘটনার পর তাদের বিব্রত হতে হচ্ছে।
নগ্ন হওয়ার ঘটনাটি ঘটে গত ১৯ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানাধীন পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার টং ফকির মাজার লেনে। এই সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় ২৫ আগস্ট।
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করতেও আহ্বান জানান। এসব ঘটনা পুলিশের নজরে এলে নগ্ন হওয়া বাবলুকে আটক করে তারা।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, বাবলু নগ্ন হয়ে আছেন, এমন এক পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েক হাত সামনে একটি ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী এক নারী। তরুণের সামান্য পেছনে তাঁর মা এবং ভাবিকে দেখা যায়।
ওই ছবিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বলা হয়, বাবলুর মাত্র কয়েক হাত সামনে থাকা ৩৬ বছর বয়সী এক নারীকে দেখে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু সদরঘাট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তার হোসেন বলছেন, সামনে থাকা ওই নারীকে দেখে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ধর্ষণের হুমকি দেননি বাবলু। বাবলু ও তাঁর অন্য প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বাবলু তাঁর পরনের কাপড় উন্মুক্ত করে প্রতিবেশীর এক নারী সদস্যকে (৪৬) উদ্দেশ করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। ঘটনার সময় ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৩৬ বছর বয়সী আরেক প্রতিবেশী নারী সেখানে দাঁড়িয়ে কৌতুহলবশত ঝগড়া দেখছিলেন। ওই নারী ও বাবলুর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাবলু ৪৬ বছর বয়সী যে নারীকে ধর্ষণের হুমকি দেন তাঁর ছবি আসেনি।
মামলা তদন্তকারী সূত্র বলছে, বাবলু ও তাঁর প্রতিবেশী পরিবার একে অপরের বিরুদ্ধে মাদক ও জমিজমা সংক্রান্ত একাধিক মামলা করেছে। ঘটনার পর বাবলুর নগ্নজাতীয় কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় পুলিশ বাবলুকে আটক করে। আটকের পর প্রতিবেশী নারী বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় বাবলুর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা-বার্তা ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির অভিযোগ এনে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, বাবলু তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘ঘটনার সময় ৩৬ বছর বয়সী ওই নারী (ছবিতে থাকা) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।’
পরে ওই মামলায় বাবলুকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর ৩৬ বছর বয়সী ভাইরাল হওয়া ওই নারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের কাছে গিয়ে একটি মুচলেকা দেন।
মুচলেকার কথা উল্লেখ করে আক্তার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই নারী থানায় এসে মুচলেকা দিয়ে বলেছেন, বাবলু তাঁকে কিছু বলেননি। ধর্ষণের হুমকিও দেননি। তবে ঘটনার সময় তিনি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’
আক্তার হোসেন বলেন, ‘শুধু মুচলেকা নয়, আদালতে বাবলুর জামিন শুনানির দিন ওই নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যতে তিনি মুচলেকার কথাগুলোই বলেছিলেন। তবে তিনি এই ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন সেটাও জানিয়েছিলেন। পরে আদালত বাবলুর জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতের মন্তব্য, যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে বাবলুর এই আচরণ ভীষণ কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার। এটা বাবলু যেকোনো নারীর ক্ষেত্রে করতে পারেন না।’
বাবলুর বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে ৪৬ বছর বয়সী নারী বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট মাদারবাড়ী এলাকার টং ফকির মাজার লেনের আবদুল মাবুদের বাড়ির সামনের রাস্তার ওপর আমি ও আমার স্বামীসহ নিচ তলার ভাড়াটিয়া শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে কথা-বার্তা বলছিলাম। এমন সময় আসামি অভিযুক্ত বাবলু আমাকে দেখে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা-বার্তা বলতে থাকে। কেন এমন কথা বলছে, তার কারণ জানতে চান আমার স্বামী। পরে বাবলু তার প্যান্ট খুলে উলঙ্গ হয়ে গোপন অঙ্গ দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করবে বলে হুমকি দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বাবলু রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করা মেয়েদের নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে থাকে।’
এসব ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় ভাইরাল হওয়া ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে। সে সময় ওই নারী, তাঁর স্বামী ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পরিবার বলছে, তাঁর ছবি ভাইরাল করে তাঁকে হয়রানি করা হয়েছে। এসব ঘটনা লোক জানাজানি হওয়ার পর থেকে তাদের বিব্রত হতে হচ্ছে।
৩৬ বছরী ওই নারী বলেন, ‘আমার ছবি ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বাবলু আমাকে কোনো খারাপ কথা বলেনি। আমি থানায় মুচলেকা দিয়ে সেই কথা জানিয়েছি। বাবলুর জামিন শুনানির দিনও আদালতে দাঁড়িয়ে আমি একই কথা বলেছি। অথচ, ফেসবুকে আমাকে নিয়ে নানা কথা লেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আমি ভীষণ বিব্রত। আমার একটি ১৬ বছরের মেয়েও আছে।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ফেসবুকে যে নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে তাঁকে বাবলু কিছু বলেনি। তবে তিনি ঘটনার সময় ওখানে উপস্থিত ছিলেন। বাবলু আমাকে বাজে কথা বলেছিল এবং ধর্ষণ করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। বাবলুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর তার পরিবারের লোকজন আমাকে আরো বেশি জ্বালাচ্ছে। নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে।’
গত ২৫ আগস্ট দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাবলুর নগ্ন হওয়ার ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়ে অনেকে তার শাস্তি দাবি করে সে সময়। এসব স্ট্যাটাসে অভিযোগ করা হয়, বাবলু তার সামনে থাকা ছবির ওই নারীকে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। তার পেছনে ছিল মা ও ভাইয়ের স্ত্রী।