চিকিৎসক হয়রানি বন্ধে সরকারের সহায়তা চায় এফডিএসআর
লকডাউনে চিকিৎসক হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিলিটি (এফডিএসআর)। হয়রানি বন্ধে তারা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে৷
আজ সোমবার রাতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে এফডিএসআর। এতে বক্তব্য দেন এফডিএসআরের উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার, চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা শাহেদ ইমরান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। এ সময়ে সামনে থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে চিকিৎসক সমাজ। অথচ গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেই প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক ডিউটিতে যাওয়ার পথে একাধিক স্থানে পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়েছে। এহেন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। তারপরও এ ধরনের হয়রানি বন্ধ হয়নি।
ডা. আব্দুন নূর তুষার অভিযোগ করেন, গত রোববার হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষে ফেরার পথে এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি একদল পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ইতিমধ্যে এই ঘটনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আংশিক ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ডা. তুষার বলেন, একদল পুরুষ পুলিশ একজন মহিলা চিকিৎসককে প্রকাশ্য রাজপথে হেনস্তা করছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখ সারিতে লড়ছে, হাসপাতালে অসংখ্য কোভিড রোগীর চিকিৎসা শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ ডা. সাঈদা শওকত জেনির গাড়ি থামিয়ে তাঁর কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চায়। এ সময়ে নিজের পরিচয় ও গাড়িতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক কর্তৃক ইস্যুকৃত মুভমেন্ট পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সংবলিত স্টিকার ও বিএসএমএমইউর লোগোসহ ডাক্তারের নামাঙ্কিত অ্যাপ্রন দেখালে সবকিছুকে ভুয়া বলে পুলিশ ডা. জেনিকে চরমভাবে উত্ত্যক্ত করে। এর মাধ্যমে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসক সমাজকেও হেয় করেছে। এই ঘটনার কোনো ভিডিও করা হয়নি। অথচ ডা. জেনিকে হেনস্তা করার মাধ্যমে উত্তেজিত করে ঘটনার আংশিক ভিডিও করা হয়েছে যেখানে আমরা দেখেছি, পুলিশ ডা. জেনির কাছে অন্যায়ভাবে মুভমেন্ট পাস চেয়েছে। অথচ ডাক্তারদের মুভমেন্ট পাস লাগবে না বলে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা আরও দেখেছি, পতিতাবৃত্তির পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত পাপিয়ার সঙ্গে পুলিশ ডা. জেনির তুলনা করেছে, যা একজন নারী চিকিৎসকের জন্য চরম অবমাননাকর।
চিকিৎসকের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীর বিক্রমের কন্যার পরিচয় দেওয়ার পরেও পুলিশ যেভাবে উদ্ধত ভাষায় কথা বলেছে, তা যুগপৎ আমাদের ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ করেছে বলেও মন্তব্য করেন ডা. তুষার। তিনি বলেন, একজন নারী চিকিৎসককে এতগুলো পুরুষ পুলিশ মিলে এমন ঔদ্ধত্যের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে? পুলিশের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমরা ডা. সাঈদা শওকত জেনিকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি করোনার এই দুঃসময়ে চিকিৎসক হেনস্তাকারী পুলিশদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মহিলাদের সাথে কথা বলার জন্য রাজপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন বারবার চিকিৎসক হয়রানি বন্ধের জন্য আমাদের আশ্বস্ত করছে, তখন মাঠপর্যায়ে চিকিৎসকদের প্রতি কতিপয় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের হয়রানিমূলক আচরণে আমরা যুগপৎ হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। এসব ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তার অতীত সম্পর্কে যেসব তথ্য ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তাতে আমরা রীতিমত আতঙ্কিত বোধ করছি। তবে কি এসব ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশেরা সুকৌশলে ডাক্তার এবং পুলিশবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সরকারকেই বিপদে ফেলার কোনো ষড়যন্ত্র করছে? এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা উচিত।
পাশাপাশি পথে পথে চিকিৎসকদের আইডি কার্ড চেয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে অভিযোগ করে ডা. তুষার বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০ হাজারের মতো সরকারি এবং ৫০ হাজারের বেশি বেসরকারি চিকিৎসক বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত। বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসকেরই প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড নাই। আইডি কার্ড না থাকলেও প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যুকৃত ছবি সংবলিত পাশ বা চিঠি, এমন কি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে চিকিৎসকের পরিচিতি শনাক্ত করতে পারে। লকডাউনে আইডি কার্ড বহনের গুরুত্ব কী? কোনো ব্যক্তি ডাক্তার কি না সেটি নিশ্চিত করা নাকি কেবল আইডি কার্ড সঙ্গে আছে কি না সেটা চেক করা? চিকিৎসকদের গাড়ি বা রিকশা থামিয়ে অন্যায়ভাবে জরিমানা করার হারও গত কয়েকদিনে বহুগুণ বেড়েছে। এভাবে চললে চিকিৎসকরা তো ঘর থেকে বেরোনারই সাহস পাবে না। পাশাপাশি তাদের মনোবলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া করোনা মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক, পুলিশসহ অনেকেই জীবন দিয়েছেন। এই যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৮০ জন চিকিৎসক।