চাল চুরির অভিযোগ আনায় সাংবাদিককে পিটুনি, চেয়ারম্যানপুত্র গ্রেপ্তার
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য বরাদ্দ থাকা চাল চুরির অভিযোগ এনেছিলেন স্থানীয় এক অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক সাগর চৌধুরী। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জসিম হায়দারের ছেলে নাবিল হায়দার সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর সাগর চৌধুরী থানায় মামলা করলে নাবিলকে আজ বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলা সদরের রাজমনি সিনেমা হলের সামনে সাংবাদিক সাগরকে আটক করে অতর্কিতে হামলা চালান নাবিল। হামলার সময় পুরো ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করে সাগরকে ছিনতাইকারী ও মোবাইল চোর বলে অপবাদ দেন নাবিল। পরে ফেসবুকের ওই লাইভ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
আহত সাগর চৌধুরী বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল সকাল ৬টার দিকে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ছেলে নাবিল হায়দার আমাকে ফোন করে বলে, ‘আপনার সঙ্গে জরুরি কথা আছে, একটু আসেন।’ তখন আমি বলি, এত সকালে আমি কীভাবে আসব? তারপরও আমি সেখানে যাই, এরপর সিনেমা হলের দোতলায় আমাকে ডেকে নেয় সে। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। আমি দোতলা থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে চাই। তখন সে পেছন থেকে আমার কলার চেপে ধরে এবং চোখ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য আঘাত করে। মাথায়ও আঘাত করেছিল, সে জন্য মাথা ফুলে গেছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্য দুহাত দিয়ে গলা চেপে ধরে। এ ছাড়া শরীরের অনেক জায়গায় আঘাত করে সে।”
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাংবাদিক সাগর চৌধুরী বাদী হয়ে জসিম হায়দারের ছেলে নাবিল হায়দারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। আজ বুধবার নাবিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনায় ভোলার সাংবাদিক নেতা, অনলাইন এডিটরস কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ ও মাহমুদ হোসেন মোয়াজ্জেম।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে প্রত্যেক জেলের জন্য ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ করে সরকার, যা স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জেলেদের দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, বড় মানিকা ইউপির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে জেলেদের ১৪ কেজি করে চাল দিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজীকে (ভারপ্রাপ্ত) এ অভিযোগ করেন সাংবাদিক সাগর চৌধুরী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাবিল হায়দার সাংবাদিক সাগরকে মারধর করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. বশির গাজী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাংবাদিক সাগর চৌধুরী আমাকে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি বলছেন, সরকারি চাল ৪০ কেজির পরিবর্তে ১৪ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি অস্বীকার করে ভিডিওতে অভিযোগ আনা ওই দুই ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। তখন ওই দুই ব্যক্তি লিখিত বক্তব্য দেন যে চাল কম দেওয়ার ব্যাপারে বলার জন্য সাংবাদিক সাগরই তাঁদের শিখিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ও তাঁর ছেলে নাবিল হায়দারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।