চন্দনাইশে নিখোঁজ আমজু মিয়ার সন্ধান দুই মাসেও মেলেনি
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের রেগঘাটা এলাকা থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন আমজাদ হোসেন ওরফে আমজু মিয়া (৫৫)। প্রায় দুই মাস হতে চলল। এখনো আমজু মিয়ার সন্ধান পায়নি পুলিশ।
এরই মধ্যে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার, তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও আসামিরা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তবে নিখোঁজ আমজু মিয়ার সন্ধান এখনো পুলিশের অজানা। তিনি কি বেচে আছেন? নাকি মারা গেছে সেটিও নিশ্চিত নয় পুলিশ। ফলে ভিকটিমের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা। অজানা আশঙ্কায় শঙ্কিত তারা। এরই মধ্যে আছে আসামিদের অব্যাহত হুমকি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে নিখোঁজ আমজু মিয়ার পরিবারকে।
গত বুধবার সকালে চন্দনাইশ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরির্দশন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় জড়িত এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর নয় পুলিশ। অনেক আসামি ঘুরছে প্রকাশ্যে। অপরদিকে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অনিহা থাকলেও বাদী ও বাদীর পরিবারকে হয়রানি করতে বেশ পটু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হামজা। থানায় মামলা না নেওয়ার পর পর আদালতে মামলা করায় বেশ ক্ষেপেছেন তিনি। এরইমধ্যে মামলার বাদী ও তাঁর বৃদ্ধা মাকে বেশ কয়েকবার বাড়িতে গিয়ে হুমকি, বাদীকে সহায়তা করা লোকজনকে আটক করে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, আমজু মিয়া নিখোঁজের ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করলে আদালত এ অভিযোগটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়। বর্তমানে এ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। মামলা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন ধোপাছড়ি তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মো. আমির হামজা। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর রাত আনুমানিক ৪টার দিকে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চাপাছড়ি এলাকার মৃত হাজি মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে আমজাদ হোসেন ওরফে আমজু মিয়াকে ফোন করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার কথা বলে ডেকে নিয়ে যান একই ইউনিয়নের নুরুল আমিন ওরফে কালা আমিন। এরপর আর ফিরে আসেননি আমজু মিয়া। স্থানীয়ভাবে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর চন্দনাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন পরিবারের সদস্যরা। জিডি নম্বর ১১১৫। এ ঘটনার পর ওই দিনই স্থানীয় লোকজন নুরুল আমিন ওরফে কালা আমিনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করলে পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠায়।
এরই মধ্যে নিখোঁজ আমজু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর বাদী হয়ে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সি আর (২৫৫/১৯) মামলা করলে আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চন্দনাইশ থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আমির হামজা বলেন, আসামিরা আমজু মিয়ার নিখোঁজ সম্পর্কে জানেন না উল্লেখ করে একে অপরকে দোষ দিচ্ছে। বিষয়টি আমি আদালতে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এদিকে মামলার বাদী মোহাম্মদ আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেয়ে আমাদের হয়রানি করতে বেশি সময় ব্যয় করছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও আমাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে। আর আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশের এমন ভূমিকায় আমি পুরো পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
মামলার তদন্ত ও ভিকটিম উদ্ধারের প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই আমির হামজা বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে এখন। এর বাইরে আর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’ ভিকটিম উদ্ধারের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় লাগবে।’