চট্টগ্রাম বন্দরে ১৪ মাসেও খালাস হয়নি কুয়েত প্রবাসীদের মালামাল
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রবাসে দীর্ঘ হচ্ছে বেকারের সংখ্যা। কাজ না থাকায় অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এর মধ্যে কুয়েত থেকে প্রবাসীদের পাঠানো গৃহস্থালি আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় মালামাল ১৪ মাসেও হাতে পায়নি তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। পুরোনো জিনিসপত্রের শতভাগ রাজস্ব দাবি করায় এসব পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না।
বিদেশ থেকে পাঠানো এসব মালামালের অর্ধেক এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রবাসী শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
অপরদিকে, কাস্টমসের নতুন মালের হিসাবে সম্পূর্ণ রাজস্ব না দিলে এসব মালামাল খালাস সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, কুয়েত থেকে পাঠানো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে গত ১৪ মাস ধরে আটকে আছে সি কার্গোতে পাঠানো প্রায় ৪০ হাজার কুয়েত প্রবাসীর মালামাল। কুয়েত থেকে যেসব প্রবাসী পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব মালামাল পাঠিয়েছে তা দেড় মাসের মধ্যে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু প্রায় ১৪ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো সেসব মালামাল বুঝে পায়নি তারা। ফলে একদিকে কার্গো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গ্রাহকদের ঝামেলা চলছে, অন্যদিকে এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট পাঁচ শতাধিক প্রবাসী ব্যবসায়ীও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশে অনেক শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কার্গো ব্যবসায়ী কুয়েত প্রবাসী মো. বাহার উল্ল্যাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কুয়েতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন দুই শতাধিক কার্গো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পুরোনো মালামাল পাঠানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান বেশ সুনামের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু ১৪ মাস ধরে হঠাৎ এ ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হচ্ছে। নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার মতো দেশে এ পদ্ধতিতে মালামাল পাঠানো হলেও তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
বাহার উল্ল্যাহ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কুয়েত দূতাবাসে চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে মালগুলো খালাস দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো এসব মালামালের আইপি সিপি অর্থাৎ পুরো রাজস্ব দিয়ে জিনিসপত্র খালাস করার কথা বলা হয়। কিন্তু আমরা তো দেশে ব্যবসায়িক কারণে এসব মালামাল পাঠাইনি। যে কারণে এসব মালের আইপি সিপি অর্থাৎ সম্পূর্ণ রাজস্ব দিয়ে খালাস করা সম্ভব না। এ কারণে দীর্ঘ ১৪ মাসেও এসব মালামাল খালাস হয়নি। এতে অনেক প্রবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতে অনেক প্রবাসী বেকার। এর মধ্যে শ্রমিকদের ছোটখাটো জিনিসপত্র রেখে তাদের জীবন আরো দুর্বিসহ করে তোলা হচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কুয়েতে অনেকে বেকার অবস্থায় জীবনযাপন করছি। যদি কোনো ভুল করি তবে ক্ষমার চোখে দেখে আমাদের মতো অসহায় শ্রমিকদের জিনিসপত্রগুলো খালাস করার ব্যবস্থা করে দেন।’
এদিকে, কুয়েত প্রবাসী পুরান ঢাকার বাসিন্দা আসমা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাসাবাড়িতে কাজ করে জাকাতের কিছু কাপড় পেয়েছি। এসব কাপড় এবং চকলেট পাঠিয়েছি কার্গোতে। কিন্তু ১৪ মাসেও এসব পণ্য না পাওয়ায় সেসব মালামালের অনেকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। তবু বাকি মালামাল যেন স্বজনরা পায়।’
কুয়েতপ্রবাসী শরিফ বলেন, ‘গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র পাঠিয়েছি। এত দিনেও এসব পণ্য খালাস দেওয়া হয়নি। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
জানে আলম নামের এক কুয়েতপ্রবাসী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রবাসী দেশে ফেরত আসছে। কুয়েতে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি কার্গো ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের অধীনে কয়েকশ শ্রমিক রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পুরোনো এসব পণ্য আটকে থাকায় কার্গো ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে। এ কার্গো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে শ্রমিকরা ফেরত যাবে। বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরিব অসহায় মানুষদের পাশে যেন দাঁড়ান। অন্তত এবার নিয়মিত রাজস্ব আদায় করে মালগুলো যেন খালাস করে দেন।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্মকর্তা এম. ফকরুল আলম বলেন, ‘যেসব মালামাল পড়ে আছে তার সবকিছু পুরোনো নয়। বরং নতুন মালামালও রয়েছে। তাই এনবিআরের বিধি মেনে বিদেশ থেকে মালামাল আনলে সিঅ্যান্ডএফের মাধ্যমে বিল ওপেনটি করতে হয়। অর্থাৎ মালামালগুলো তালিকা, মালিকানা সবকিছু জমা দিতে হয়। আইপি সিপি বা শতভাগ রাজস্ব দিয়ে এসব মালামাল খালাস করতে হবে। যেসব কোম্পানির মালামাল পড়ে আছে তারা তো পুরো রাজস্ব দিয়ে বিল ওপেনটি করছে না। তাহলে এটা খালাস হবে কীভাবে?’
অপরদিকে, এনবিআরের শুল্ক কর্মকর্তা এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এনবিআরের ব্যাগেজ রুলস নিয়মানুযায়ী মালামাল না আনায় এসব পণ্য পড়ে আছে। আইন মেনে এসব পণ্য আনলে সমস্যা হতো না। একটি পাসপোর্টের অধীনে সর্বোচ্চ ৬৫ কেজি মালামাল বহন করা যায়। কিন্তু একটি পাসপোর্টের অধীনে অনেক বেশি মালামাল রয়েছে। এ কারণে এটি খালাস করা যাচ্ছে না।: