চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে অসহায় পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবার। চারিয়া ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় জমি নিয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হচ্ছে পরিবারটি।
সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল গভীর রাতে কাজীপাড়া বাড়ি থেকে কক্সবাজারের রামু থানার পুলিশ পরিদর্শকের ছোট ভাই কাজী আজিম উদ্দিনকে (২৮) তুলে নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এক মাস ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আজিম উদ্দিন। তিনি মৃত কাজী মোহাম্মদ ইসহাক মাস্টারের ছেলে।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজিম উদ্দিনকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে বেধড়ক মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁর চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আর পুলিশ পরিদর্শক হয়েও সরকারি চাকরি ও উল্টো মামলার ভয়ে পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছেন না কাজী সুলতান আহসান।
২০০২ সালে বাবা কাজী মো. ইসহাক মাস্টার স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ব্রিকফিল্ড ব্যবসায়ী মো. শামসুল আলমের কাছে ১০ কানি বা চার একর (৪০০ শতক) জমি মাসিক ছয় হাজার টাকায় ১০ বছরের জন্য ভাড়া দেন। ২০১২ সালে ১০ বছরের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। এর আগে ২০১০ সালে কাজী ইসহাক মাস্টার মারা যান। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শামসুল আলম জমি না ছেড়ে স্থানীয় বখাটেদের হাতে তুলে দেন। এর পর থেকে ব্রিকফিল্ডের কাজে জমির মাটি বিক্রি করে আসছে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়ার পর থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে চক্রটি। হাতবদল করে একাধিক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয় জমিগুলো। চক্রটি জমির সব মাটি মেশিন দিয়ে উঠিয়ে বিক্রি করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি জমির আশপাশে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বনজসম্পদও উজাড় করে চক্রটি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এসব ঘটনার পর হাটহাজারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে জমি উচ্ছেদের জন্য অভিযোগ দেন তাঁরা। বিবাদীদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ছয় মাস পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে জমি উচ্ছেদের জন্য মামলা করেন। এ ছাড়া তাঁদের জমিতে লেভার শেড নির্মাণ করতে চাইলে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। একাধিকবার তাঁদের পরিবারের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
সর্বশেষ গত মাসের ৮ এপ্রিল গভীর রাতে স্থানীয় দুর্বৃত্ত শাখাওয়াত, আবদুল মুবিন ওরফে ইকবালসহ সন্ত্রাসীরা পুলিশ পরিদর্শকের ছোট ভাই কাজী আজিম উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। উপর্যুপরি হামলা করে তাঁকে জখম করে। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আজিম উদ্দিনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
পুলিশ কর্মকর্তা কাজী সুলতান আহসান বলেন, ‘একজন পুলিশ অফিসার হয়েও একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছি সন্ত্রাসীদের কাছে। সরকারি চাকরির কারণে প্রতিবাদ করতে পারছি না। মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থের জোরে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ নিচ্ছে। তাদের অত্যাচারে আমি বাড়িতে যেতে পারি না। বাড়িতে গেলেও শান্তিমতো থাকতে পারি না। তারা আমাকে বিভিন্ন স্থানে লাঞ্ছিত করে। নানা কটূ কথা বলে মানুষের সামনে অপমানিত করে। আমার পরিবারের সদস্যদেরও কটূ কথা বলে হামলা করে। তাদের হামলার শিকার আমার ছোট ভাই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমি একজন আইনের লোক হয়েও সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায়।’
এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। মাটি কেটে নেওয়াসহ নানা কারণে একটি চক্রের রোষানলে পরিবারটি। ঘটনার পর একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের অভিযান বন্ধ থাকলেও আমরা এ ব্যাপারে সজাগ আছি।’