চট্টগ্রামে আ.লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগনেতা মহিবুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. ইউনুছ মনি ওরফে মইন্যাকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উপজেলার শিলক ইউনিয়নের নটুয়ার টিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুর্গম পাহাড়ের দিকে পলায়নরত অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া ইউনুছ মনি রাঙ্গুনিয়ার কোদালা সেনবাড়ি এলাকার মৃত নূর হোসেনের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, সরকারি কাজে বাঁধাদান, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাঙ্গুনিয়া থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া আরও জানা যায়, মামলা হওয়ার পর থেকেই ইউনুছ শিলকের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আত্মগোপন করেন। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি দ্রুত স্থান বদলাতেও থাকেন। কয়েকবার কাছাকাছি গিয়েও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অবশেষে ধারাবাহিক অভিযানে আজ সকালে ইউনুসের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে পুলিশ। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে রাঙ্গুনিয়ার শিলক নটুয়ার টিলা এলাকা থেকে দুর্গম পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে সার্কেল এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কিসহ একদল পুলিশ সদস্য অংশ নেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ইউনুছ যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া সাবেক বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী মর্মেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে নারীসহ হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজতের হামলার প্রথম বলি হয়েছিলেন রাঙ্গুনিয়ার আওয়ামী লীগনেতা মো. মহিবুল্লাহ। গত ৩ এপ্রিল রাত ৮টায় মামুনুলকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন হেফাজত ইসলামসহ স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সামনে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মহিবুল্লাহ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার আজম লিটন আহত হন। গুরুতর আহত মহিবুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাঙ্গুনিয়া থানায় দাঙ্গা সৃষ্টি ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। মামলা দুটিতে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মী ও হেফাজত সমর্থকসহ ৬৪ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনসহ মোট ২১৪ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা বিএনপি নেতা মো. ইউনুছ মনিকে।
এ প্রসঙ্গে সার্কেল এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘অনেকদিন ধরে নজরদারি চালানোর পর আজ দুপুরে আমরা ইউনুছ মনিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত করে এই মামলার ঘটনায় যুক্ত অন্য সব আসামিকেও অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’