গ্রিল ভেঙে মা-বোনকে আগুন থেকে বের করেন ইমন
রান্নাঘরে জমে থাকা গ্যাসের আগুনের ঘটনায় মা ও দেড় বছরের ছোট বোনকে নিরাপদে বের করে এনেছেন আবুল হোসেন ইমন। এ ঘটনায় ইমনসহ তাঁর পরিবারের সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ইমনের দাদি নুরজাহান বেগম মারা গেছেন।
লাইনের গ্যাসে চাপ না থাকায় সিলিন্ডার ব্যবহার করা হতো ব্যবসায়ী যুবক ইমনের বাসায়। গ্যাসের সমস্যার কারণে রাতে চুলার সুইচ চালু করেই ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। নুরজাহান বেগম আজ সোমবার ভোরে ম্যাচ জ্বালাতেই জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
ইমনদের গেঞ্জি কারখানার কর্মী মোসা. রাহেলা বেগম বলেন, ঘরে ইমনের মা লিপি বেগম ও দেড় বছরের ছোট বোন ইকরা ছিল। আগুন লেগে যাওয়ায় ইমন তাঁদের দরজা দিয়ে না বের করে শাবল দিয়ে বারান্দার গ্রিল ভেঙে তাদের দুজনকে বের করেন। এ জন্য তারা আগুন থেকে রক্ষা পায়। তবে তাদের বের করতে গিয়ে ইমন দগ্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁকেও ঘর থেকে বের করা হয়।
রাহেলা বলেন, ‘আমি উনাদের কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। ছয় থেকে সাত বছর ধরেই ওই এলাকায়ই থাকি। কোনো বাসায়ই দিনের বেলা লাইনে গ্যাস থাকে না। রাত ১২টার পরে গ্যাস আসে, আবার ভোর হলেই গ্যাস শেষ হয়ে যায়। শীতের দিন, গরমের দিন একই সমস্যা। আর রাতে গ্যাসের চুলা চালু দিলেও আধা ঘণ্টা পর্যন্ত গ্যাসের পাইপ দিয়ে শুধু পানি আসে। এরপর গ্যাস আসে। এ জন্য ওই এলাকার সবাই রাতে ঘুমানোর আগে চুলার সুইচ চালু দিয়ে রাখে। এ কারণে ইমনদের বাসায়ও চুলা চালু দিয়ে রেখেছিল। আর রান্নাঘরের দরজা-জানালাও বন্ধ ছিল। ভোরে ইমনের দাদি নুরজাহান ঘুম থেকে উঠে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে ম্যাচ জ্বালতেই জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণ হয়। এতে প্রথমে নুরজাহান দগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে বাকি ঘরগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়লে আটজনই দগ্ধ হন। পরে বাকিরা দরজা খুলে নুরজাহানকে নিয়ে বাইরে বের হন।’
এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন আবুল হোসেন ইমন (২৩), তাঁর ছোট ভাই মাদ্রাসাছাত্র আপন (১০), বাবা মো. কিরণ মিয়া (৫০), চাচা মো. হিরণ মিয়া (৩০), চাচি মুক্তা বেগম (২০) ও চাচাতো বোন লিমা (৩) ও ফুপাতো ভাই স্কুলছাত্র কাউছার আহমেদ (১৩)। ইমনের দাদি নুরজাহান বেগম (৭০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ইমনের ফুফা মো. ইলিয়াস জানান, ইমনদের বাড়ি নরসিংদী শিবপুর উপজেলার কুমড়াদি গ্রামে। তাঁরা সাইনবোর্ডের সাহেবপাড়া ফারুকের পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন। সাইনবোর্ডে ‘নরসিংদী গার্মেন্টস’ নামে একটি গেঞ্জির কারখানা আছে তাঁদের। আর ওই কারখানারই শোরুম ঢাকার গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ডে। ইমন, তাঁর বাবা কিরণ ও চাচা হিরণ একই সঙ্গে ব্যবসা করেন। থাকতেনও একই বাসায়। পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেন ইমন। তাঁর স্ত্রী শামীমা সিদ্দিকী ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন না। এর আগেই সানারপাড়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন শামীমা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, ইমনের শরীরের ৪৫ শতাংশ, কিরণের ৭০, হিরণের ২২, কাউছারের ২৫, মুক্তার ১৫, লিমার ১৪ ও আপনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া নিহত নুরজাহানের শরীরে শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল। বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
ইমনের চাচা মো. কিরণ মিয়াকে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকি ছয়জনকে বার্ন ইউনিটের ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।