গোপীবাগে ৬ খুন : ৬ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি
রাজধানীর গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জনকে খুনের ঘটনায় ছয় বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। এ পর্যন্ত ১০০ বার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আর এ তদন্ত প্রতিবেদন না আসায় বিচার কার্যক্রম আটকে রয়েছে।
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর গোপীবাগের বাসায় পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জন খুন হন। এরপর এই ঘটনায় ওয়ারী থানায় মামলা করেন নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক। এরপর এ মামলায় আটজন গ্রেপ্তার হন। মামলার পরে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এ মামলায় তদন্ত করে। তবে সর্বশেষ এ মামলাটি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্ত করছে। আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারণ করা আছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে জুলফিকার ওরফে সাদ বিন রিপন, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নীরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, মো. গাফ্ফার, মো. আজমেরী ওরফে অমিত ও মো. গোলাম সরোয়ার। এর মধ্যে মো. আজমেরী ওরফে অমিত ও মো. গোলাম সরোয়ার জামিনে আছেন। এছাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি হামলা মামলায় গোপী বাগের ছয়খুনের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে জুলফিকার ওরফে সাদ বিন রিপন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছয়জনকে হারিয়েছি ছয় বছর হয়ে গেল। এখনো বিচার পেলাম না। আমরা সবাই হতাশ। তবু আশায় আছি বিচার হবে।’
ফারুক বলেন, ‘বাবাকে হারিয়েছি। বাবার পরে ভাইয়ের স্থান। তাঁকেও হারিয়েছি। সংসার গোছাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এত দিনেও বিচার শুরু না হওয়ায় চরম হতাশ আমরা।’
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটির তদন্তে নতুন কোনো আপডেট নেই। কবে নাগাদ মামলাটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া যাবে এ মুহূর্তে তাও বলা যাচ্ছে না।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, নিহত লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। তাঁর অনেক মুরিদ ছিল, যারা বাসায় যাতায়াত করত। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। তাঁর ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে প্রচলিত ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। যার কারণে এর আগে রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেণ্ডারিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়।
নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০-১২ জন লোক ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে বলে জানায়। লুৎফর রহমান ফারুক সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মুরিদ শাহিনকে বাজারে পাঠান। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তাঁর বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম ও রাসেল ভূঁইয়ার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে এবং হাত-পা বেঁধে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। একই সময় আসামিরা লুৎফর রহমান ফারুকের তাউই, আনোয়ার মিস্ত্রি ও অন্য একজন মুরিদকে হাত-পা-মুখ বেঁধে দরবার রুমে ফেলে রাখে।