‘গাড়িচালক মালেকের মতো আরো কেউ থাকলে খুঁজে বের করা হবে’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক আবদুল মালেকের সম্পদের বিবরণ শুনে বিস্মিত ও হতবাক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অতি দ্রুত আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আবদুল মালেকের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সকালেই ঘুম থেকে ওঠে পত্রিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেককে গ্রেপ্তারের খবর ও তার অর্থ সম্পদের বিবরণ দেখলাম। আমার কাছে বিষয়টি গভীর বিস্ময়ের মতোই লাগছে। সামান্য বেতনের একজন গাড়িচালক চাকরিতে থেকে এত সম্পদ করল কীভাবে!’
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘দুপুরে আমি একটি সেমিনারে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও ছিলেন। সেমিনারের এক ফাঁকে আমি মহাপরিচালকের সঙ্গে গাড়িচালক আবদুল মালেকের গ্রেপ্তার হওয়া ও দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে কথা বলেছি। তিনিও (মহাপরিচালক) আবদুল মালেকের সম্পদের বিবরণ শুনে হতবাক। দ্রুত আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।’
সচিব বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না। আমরা এই নীতিতেই এগিয়ে চলছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবদুল মালেকের মতো আরো কেউ থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকা থেকে আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আবদুল মালেককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন গাড়িচালক ও একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। মালেক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবদুল মালেকের স্ত্রীর নামে কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে, ধানমণ্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন আছে। এ ছাড়া দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তাঁর বিপুল অর্থ গচ্ছিত আছে।
এসব ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আবদুল মালেক তাঁর অবৈধ সম্পদ রক্ষার জন্য বিদেশি পিস্তল ব্যবহার করেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন ছিলেন। অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ভালো ব্যবহার করে এই ধরনের সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে র্যাব জানতে পেরেছে। আবদুল মালেকের ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ আছে। তাঁর নামে জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করার নাম করে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আনুকুল্য নিয়ে এত টাকার মালিক হয়েছেন বলে র্যাব জানতে পেরেছে।’
মালেক নিজে গাড়িচালক হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের জন্য বরাদ্দ একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো গ- ১৩-২৯৭৯) নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত পাজেরো গাড়ি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরো দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। এরমধ্যে একটি পিকআপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-৭০০১) তিনি নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রি এবং মেয়ের জামাইয়ের পরিচালিত ক্যান্টিনের মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করতেন। অপর একটি মাইক্রোবাস (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো চ- ৫৩-৬৭৪১) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করতেন।