গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অবরোধ
গাজীপুরে বকেয়া ও শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে আজ শনিবারও গাজীপুরের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে। শ্রমিকরা এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটি অবরোধ করেছে। বাধা দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ কমপক্ষে ১৪ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও স্থানীয়রা জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারেনি তাদের বেতনের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গাজীপুরের জিরানী এলাকার ডরিন গ্রুপের ডরিন অ্যাপারেলস ও ডরিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ওই সিদ্ধান্ত না মেনে শতভাগ বেতন পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার বিক্ষোভ করে।
এদিকে বিদেশে রপ্তানির কোনো আদেশ না থাকায় কারখানা দুটিতে উৎপাদন কার্যক্রম রয়েছে। এ পরিস্থিতি ওই কারখানা দু’টি লে-অফ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে তালাবদ্ধ গেটে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা শতভাগ বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারী শ্রমিকদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আশেপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আহ্বান জানায়। তাদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও যোগ দেয়। এ সময় তারা অক্কো টেক্স ও মাহমুদা পোশাক কারখানাসহ আশপাশের কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০টি কারখানায় ইট-পাথর ছোড়ে ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, পুলিশ তাদের বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ১৬৮ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৪৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। বিকেল আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিকদের ইট পাথরের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকারসহ গাজীপুর শিল্প পুলিশের কমপক্ষে ১০ জন ও অপর এক নারী পথচারী আহত হন।
এদিকে, শতভাগ বেতন ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর শরীফপুর এলাকার লুইটেক্স ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শনিবার বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে বলে শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার জানিয়েছেন।
শিল্প পুলিশের ইনস্পেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার শতভাগ বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত ওই কারখানার শ্রমিকরা ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করলে কারখানাটি দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ শ্রমিকরা কারখানায় এসে বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ সময় বৃহস্পতিবারের আন্দোলনকালে পুলিশের শর্টগানের গুলিতে এক নারী শ্রমিক নিহত ও কয়েক শ্রমিক আহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা সামনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে এবং গাড়ির পুরাতন টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে কয়েক পুলিশ আহত হয়। তারা আশপাশের কয়েকটি কারখানায়ও ইট পাথর ছুড়ে ভাঙচুর করেছে। শ্রমিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে, একই দাবিতে এদিন সকাল থেকে মহানগরীর কুনিয়া তারগাছ এলাকার লোলুরেন্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংমহাসড়ক অবরোধ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের ইনস্পেক্টর ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান।
অপরদিকে, শ্রীপুরের মাস্টারবাড়ী এলাকার ডেনিম্যাক লিমিটেডের শ্রমিকরা শতভাগ বেতন ও অর্জিত ছুটির বকেয়া ভাতার দাবিতে আজ বিকেলে বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসলাম হোসেন।