গাংচিল বাহিনীর প্রধানসহ তিনজন গ্রেপ্তার
ঢাকার সাভারে কয়েক বছর আগে তিন পুলিশ ও র্যাব সদস্য হত্যার ঘটনায় গাংচিল বাহিনীর প্রধান সালাউদ্দিন ওরফে এমপি সালাউদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। আজ শুক্রবার বিকেলে সাভারের আমিনবাজার এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৪ জানায়, শুক্রবার বিকেলে আমিনবাজারের সালেহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ১৯০ গ্রাম হেরোইন, ৫০০ পিস ইয়াবা ও দেশীয় অস্ত্রসহ দুর্ধর্ষ গাংচিল বাহিনীর প্রধান সালাউদ্দিন ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব-৪-এর সদস্যরা।
র্যাব-৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান চৌধুরী জানান, দুর্ধর্ষ গাংচিল বাহিনী ২০০২ সালে আমিনবাজার এলাকার পাশে সাভার থানার একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) হত্যা, ২০০৭ সালে দুজন র্যাব সদস্যকে হত্যা, দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির অস্ত্রলুট ও আমিন বাজার এলাকায় নৌটহল দলের অস্ত্রলুটের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ বাহিনী তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর বালুভর্তি ট্রলার, ইটবোঝাই কার্গোতে ডাকাতি ও আমিন বাজার এলাকার শতাধিক ইটভাটা থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করত। এ ছাড়া এলাকার প্রভাবশালীদের টার্গেট করে গাংচিল বাহিনীর সদস্যরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি এবং চাঁদা না দিলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। চাঁদাবাজি, খুন, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ তুরাগ আর বুড়িগঙ্গা নদীর দুই ধারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ছিল এই বাহিনীর প্রধান কাজ।
র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান চৌধুরী জানান, ২০০০ সাল থেকে সাভারের আমিন বাজার ও তার আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মধ্য দিয়ে উত্থান হয় গাংচিল বাহিনীর; যার প্রধান ছিলেন আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার। বেশিরভাগ সময় পানিবেষ্টিত এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় এর নাম দেওয়া হয় গাংচিল বাহিনী। ২০১৭ সালের পর সালাউদ্দিন ওরফে এমপি সালাউদ্দিন নেতৃত্বে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। এ বাহিনী মূলত আমিন বাজার, গাবতলী, ভাকুর্তা, কাউন্দিয়া, বেড়িবাঁধ, কেরানীগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, তারা সবসময় নদীতে ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এবং বেশিরভাগ সময় নদীপথে যাতায়াত করে। তাদের যাতায়াতের বাহন ছিল ডাবল ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। তারা সাভার, আমিনবাজার এলাকার বিভিন্ন ইটভাটার মালিক এবং তুরাগ-বুড়িগঙ্গা নদীতে চলাচলকারী বালু ভর্তি ট্রলার মালিকের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করত। চাঁদা না দিলে নেমে আসত ভয়াবহ বিপদ।
গাংচিল বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় খুন, অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারির একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, গাংচিল বাহিনীর প্রধানসহ তিনজনের নামে আজ সন্ধ্যায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।