গরু চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরকে নির্যাতন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে এক কিশোরকে মারধরের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জালাল নামের এক ব্যক্তি ওই কিশোরকে নির্যাতন করেন বলে জানা যায়। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতিত কিশোর (১৫) উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাসিন্দা। আর জালাল আহমদ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়ার বাসিন্দা।
এদিকে, জালাল আহমদসহ চারজনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন নির্যাতিত কিশোরের বোন জোবাইদা বেগম।
জোবাইদা বেগম বলেন, ‘স্থানীয় জালাল আহমদ বিনা অপরাধে আমার ভাইকে সোনারপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে যান। গরু চোরের অভিযোগ এনে আমার ভাইকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। সারারাত বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। সকালে গলায় জুতার মালা পরিয়ে কোদাল দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন। এতে আমার ভাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আজ সকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ রফিক ঘটনাস্থল থেকে ভাইকে উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।’
জোবাইদা বেগম আরো বলেন, ‘নির্যাতনে আমার ভাই এখন গুরুতর অসুস্থ। তার নাক ও মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমি থানায় মামলা করেছি। পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। অভিযুক্ত জালাল আহমদ মানবপাচারসহ বহু মামলার আসামি। বর্তমানে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর অপকর্মের খবর পুলিশকে বলে দেওয়ার সন্দেহে আমার ভাইকে গরু চোরের অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করেছেন।’
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোহাম্মদ রফিক সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার কিশোর একজন ছোট দোকানদার। তাঁকে স্থানীয় জালাল আহমদ গরু চুরির অভিযোগে বাজার থেকে ধরে নিয়ে যান। এরপর গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। খবর পেয়ে আমি নিজেই গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পুলিশকে তাৎক্ষণিক জানিয়েছি।’
ইউপি সদস্য আরো বলেন, ‘কিশোরের বিরুদ্ধে যে গরুটি চুরির অভিযোগ করা হয়েছে সেটি তাদের বাড়িতেই ছিল। অপরাধী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি তাদের মারধর না করতে অনুরোধ করি। কিন্তু তারা মানেনি। জালাল উদ্দিন সেখানে গিয়ে উল্টো আমার সঙ্গে বিতর্ক শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেয় আরো কয়েকজন। বাকবিতণ্ডার পর আমি বাড়িতে চলে আসি। আজ সকালে খবর পাই কোদাল দিয়ে কিশোরের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। রাতভর মারধরসহ অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা। আর নির্যাতনের একটি ভিডিও হাতে পেয়েছি আমি।’
জালাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এলাকায় যাতে আর কোনো সময় গরু চুরির মতো ঘটনা না ঘটে, পুরো এলাকাবাসীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই।’
জানতে চাইলে উখিয়া থানার নবাগত ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, ‘আমি সবেমাত্র থানায় যোগদান করেছি। অভিযোগটি আমার কাছে এখনো আসেনি। এ রকম অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’