গরম ঝড়ের পরও বিনাধান ১০-এর বাম্পার ফলন
গোপালগঞ্জে হিট শক বা গরম ঝড়ো হাওয়ার পরও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনাধান-১০ এর বাম্পার ফলন দিয়েছে। প্রতি হেক্টরে এ ধান সাত মেট্রিক টন ফলেছে। লবণ ও তাপ সহিষ্ণু এ জাতের ধানে কোনো চিটা হয়নি। বিনাধান ১০ চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছে গোপালগঞ্জের কৃষকরা।
সারা দেশে এ জাতের ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষক লাভবান হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের কৃষক মহব্বত আলী মোল্লার জমিতে উৎপাদিত বিনাধান ১০ কেটে পরিমাপ করে বিনার পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘গোপালগঞ্জ জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ একর জমিতে ৫০টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষক বিনা ১০ ধানের আবাদ করেন। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান সাত টন ফলন দিয়েছে। এ ধান হিট শকে আক্রান্ত হয়নি। মধুমতি নদীতে লবণ এসেছে। তারপরও মধুমতি নদী তীরের কৃষক তাদের জমিতে এ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছে। এ জাতের ধান হিট ও লবণ সহিষ্ণু। বোরো মৌসুমে বিআর-২৮ ধানের মতোই এ ধানের চাষাবাদ করা যায়। এ ধান চাষাবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক কম লাগে না। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান প্রচলিত ধানের তুলনায় অন্তত দুই টন বেশি ফলন দেয়। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের চাষবাদ করে কৃষক একই জমিতে বছরে আরও দুই থেকে তিনটি ফসল করে লাভবান হতে পারে। তাই সারা দেশে এ জাতের ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লবণাক্ততা নেই, এমন জমিতে এ জাতের ধান আরও বেশি ফলন দিতে সক্ষম।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক মহব্বত আলী বলেন, ‘হিট শকে আমাদের মাঠের অন্য জাতের ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমার ক্ষেতের বিনাধান-১০ আক্রান্ত হয়নি। ধানে কোনো চিটা হয়নি। বাম্পার ফলন পেয়ে আমার লাভ হয়েছে। এই ধান কাটার পর আমি এ জমিতে আরো দুটি ফসল করব। এতে আমার ধান ও অন্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
একই গ্রামের কৃষক মো. গোলাম রাব্বি খান বলেন, ‘এই ধান উৎপাদনে পানি সেচ, সার ও কীটনাশক তুলনামূলকভাবে অনেক কম লাগে। এ ধান চাষ করে বেশি ফলন পেয়ে আমি অধিক লাভবান হয়েছি। আমাদের জমি মধুমতি নদীর তীরে। মধুমতি নদীতে লবণ এসেছে। এই লবণের কারণে আমাদের মাঠের অন্য জমির ধানের ফলন কম হয়েছে। কিন্তু বিনাধান-১০ লবণের মধ্যেও ভালো ফলন দিয়েছে।’
একই গ্রামের কৃষক গফ্ফার শেখ বলেন, ‘বিনাধান-১০ হিট ও লবণসহ সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ভালো ফলন দিয়েছে। কিন্তু আমাদের জমির অন্য জাতের ধান হিট শক ও লবণের কারণে কম ফলেছে। তাই আগামীতে আমরা বিনা-১০ ধানের আবাদ করব।’
বাংলাদেশ পরমাণ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ( বিনা) মহাপরিচালক ও বিনা-১০ ধানের উদ্ভাবক ড. মির্জা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে আমাদের চাষাবাদে প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ূর সব ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিনাধান-১০ বাম্পার ফলন দিতে সক্ষম। তাই আমি ধান ও বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ জাতের ধান চাষ করার জন্য কৃষক ভাইদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করছি।’