গনোরিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মজনু!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ মজনু। ঘটনার দিন বিকেলে সে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে যৌনবাহিত রোগ গনোরিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করে। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগকে জানিয়েছে ধর্ষক মজনু।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্রটি জানায়, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে অথবা আগামী সপ্তাহে তদন্ত সংস্থাটি মজনুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি উত্তরের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শেষে অথবা আগামী সপ্তাহে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। এই মামলার পুরো তদন্তকাজ আমরা সফলভাবে শেষ করেছি। এখন আমরা অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিলের অপেক্ষায় আছি।’
ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি উত্তরের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্রটি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মজনু বহু নারীকে একইভাবে ধর্ষণ করেছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। তবে সে ধর্ষণ করেছে অধিকাংশই ভ্রাম্যমাণ নারীকে। বলা চলে পাগলি টাইপের মেয়েদের। যারা ফুটপাতেই দিনযাপন করে। ২০ বছর ধরে মজনু ঢাকার ফুটপাতেই থাকে। এ ছাড়া মজনু চুরি-ছিনতাইও করত নিয়মিত।’
ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মজনু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে মজনু জানায়, ‘ঘটনার দিন (৫ জানুয়ারি রোববার) বিকেলে কুর্মিটোলা হাসপাতালে যৌন-সংক্রান্ত রোগের (গনোরিয়া) চিকিৎসা নিই। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম। তখন ওই মেয়েকে ফুটপাত দিয়ে এদিক-সেদিক হাঁটতে দেখে মেয়েটির পেছন দিক থেকে হঠাৎ করে এক হাত দিয়ে ঘাড়ে এবং অন্য হাত নিতম্বের নিচে দিয়ে কোলে তুলি। এরপর মেয়েটিকে পাশের বাগানে নিয়ে ফেলে দিই।’
জবানবন্দিতে মজনু আরো বলে, ‘বাগানের ভেতর ফেলে দেওয়ার পর তাকে কিল-ঘুষি মারি। একটা সময় মেয়েটি জ্ঞান হারান। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মেয়েটিকে ধর্ষণ করি। ধর্ষণ করার পর তাকে নিয়ে প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা জোর করে শুয়ে থাকি। একসময় আমি মেয়েটির ব্যাগ ও মানিব্যাগ খুঁজতে থাকলে তখন দৌড়ে মেয়েটি রাস্তার ওপর চলে যায়। আমিও মেয়েটিকে ডাকতে থাকি। কিন্তু মেয়েটি আমার ডাক না শুনে দৌড়ে চলে যায়। পরে মেয়েটির ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে শেওড়া ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে রেললাইনের ওপর অরুণার কাছে মোবাইলটি বিক্রি করি। আর ব্যাগটি রাস্তার পাশে লোকজনের বসার বেঞ্চের নিচে ফেলে দিই।’
মজনুকে ধর্ষক সাজিয়ে কাউকে আড়াল করা হয়েছে—এমন একটি কথা লোকমুখে বারবার শোনা যায়। এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক বলেন, ‘ওই ছাত্রীর পাজামা থেকে সংগ্রহ করা নমুনার সঙ্গে মজনুর ডিএনএ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার প্রমাণ মিলে যায়। এ ছাড়া মজনুর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আমরা সবকিছুই যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। ওই ধর্ষক মজনুই ছিল, এটা শতভাগ নিশ্চিত।’
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর সঙ্গেও একাধিকবার কথা বলেছেন। সূত্রটি জানায়, ছাত্রীর ব্যাগে যখন মজনু বই দেখতে পায়, তখন সে বারবার জানতে চায় ‘তুমি কী করো? স্কুলে পড়ো?’ তবে ঢাবি ছাত্রী ওই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেননি। তবে মজনুর করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন বলে ছাত্রী তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন।