গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব এ রিট দায়ের করেন। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্টের ভার্চুয়াল আদালতে এ রিটের শুনানির কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব সাংবাদিকদের জানান, গণপরিবহনে দেশের সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। দেশের এ পরিস্থিতিতে কোন যুক্তিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ।
আইনজীবী বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আমাদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের অধিকাংশ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি অসহায়-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে আরো বেশি বিপর্যস্ত ও হতাশাগ্রস্ত করেছে। এ কারণে প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত চাওয়া হয়েছে।’
এদিকে, প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
নোটিশে বলা হয়, “যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আমাদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মহীন হয়ে বেকার ও মানবেতর জীবনযাপন করছে।
‘যেহেতু সরকার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের করোনাকালীন বিপর্যয় রোধের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।
‘যেহেতু করোনায় কর্মহীন এবং বেকার হয়ে পড়া নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ এবং অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়টি বিবেচনা করে এবং জাতীয় অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য সরকার সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা সাময়িক খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
‘যেহেতু দীর্ঘদিন লকডাউন থাকা কর্মহীন বেকার লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার আশায় সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদের কর্মে যোগদান করে তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো অন্ন জোগানোর জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
‘যেহেতু সরকার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করছে এবং বিভিন্ন সেক্টরে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের নগদ আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে জাতীয় অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
‘যেহেতু অদ্য আমরা হঠাৎই লক্ষ করলাম সরকারের জাতীয় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা করোনায় অসহায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে আরো বেশি বিপর্যস্ত ও হতাশাগ্রস্ত করেছে।
‘যেহেতু বর্তমান বিশ্ববাজারে তেলের দাম ইতিহাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বল্পমূল্যে উক্ত তেল ক্রয় করে সংরক্ষণ করে তাদের জাতীয় অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
‘যেহেতু সাধারণত তেলের মূল্যবৃদ্ধির ওপর বাস ভাড়া কমবেশি নির্ভর করে, সে ক্ষেত্রে যেহেতু বর্তমান বিশ্ববাজারে ইতিহাসে সর্বনিম্ন তেলের দাম পৌঁছেছে, সেহেতু অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি না করে বিশ্ববাজার থেকে কম মূল্যে তেল সংগ্রহ করে বিকল্প পন্থায় বাস মালিকদের যে বর্ধিত চাহিদা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তৈরি হয়েছে, তা সমন্বয় করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
‘সেহেতু অদ্য অত্র নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে আপনাকে জানানো যাইতেছে যে অত্র নোটিশপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, অন্যথায় বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”