গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে হটানো হবে : মির্জা ফখরুল
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে হটিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছাত্র-যুবক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, এ সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের স্মরণে এ আলোচনার আয়োজন করে ৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য। উপস্থিত হন দলের বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক। তাদের এ জমায়েত ছাড়িয়ে যায় প্রেসক্লাব মিলনায়তন।
স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধুলিসাৎ করেছে আওয়ামী লীগ, হরণ করেছে গণতন্ত্র। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে ক্ষমতাসীনরা, এমন মন্তব্য করে আন্দোলনের মাধ্যমে তা পুনর্বহালের হুঁশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল। আহ্বান জানান ছাত্র-যুবকদের সরব হতে।
কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাবেক ছাত্র নেতারা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না বলেও অঙ্গীকার করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম। লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা সেদিন স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। পরে ১৯৯০ সালে একটি গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজকে আবার সেই সময় এসেছে। আরো দৃঢ়তার সঙ্গে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন প্রায় প্রতিটি আন্দোলনে আমাদের ছাত্ররাই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে যেমন আমান উল্লাহ আমানরা তাদের দায়িত্ব পালন করে সফল হয়েছেন। ঠিক একইভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররাই সফল হয়েছিল। এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-যুবকরাই জয়ী হয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। জেহাদ যে কারণে রক্ত দিয়েছিল, সেই গণতন্ত্রকে আজকে আমাদের কাছ থেকে হরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের অর্জনগুলোকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সেই স্বাধীনতা এখন আমরা ভোগ করছি না। আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন হয়েছে। আমরা আজকে একটি নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা মানুষের জন্য যে ভালো জিনিসগুলো লাভ করেছিলাম, তা এই দানবীয় সরকার কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আদালতকে ব্যবহার করে ২০১২ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। তারপর বেআইনিভাবে প্রায় ১৪ বছর যাবৎ ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজ আমাদের কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। এই সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, আমাদের পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে ও অর্থ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই এই সরকারকে কোনোভাবেই আর সময় দেওয়া যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ আজ লিখতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না। আপনাকে যদি বাঁচতে হয়, আমাকে যদি বাঁচতে হয়, আমাদের দেশকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্জন, নব্বইয়ের অর্জন যদি ফিরিয়ে আনতে হয় তবে অবিলম্বে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে হবে সরে দাঁড়াও, সরে যাও।