খালেদা জিয়াসহ ‘ফিরোজা’য় ৯ জন করোনায় আক্রান্ত : চিকিৎসক
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তাঁর বাসভবন ফিরোজায় থাকা মোট নয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার বিকেলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও তাঁর ভাগনে ডা. মামুন এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. মামুন বলেন, ‘ফিরোজায় খালেদা জিয়ারসহ তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা, প্রাইভেটকার চালক ও অন্যান্য কাজের লোকসহ মোট নয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া এঁরাই মূলত ওই বাসভবনে থাকেন। করোনায় আক্রান্তরা সবাই ওই বাসভবনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই বাসভবনে খালেদা জিয়ার কোনো স্বজন থাকেন না। ফলে কোনো স্বজন করোনায় আক্রান্ত হননি।’
এদিকে আজ বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ডা. মামুন আরও বলেন, ‘পাঁচ-ছয়দিন আগে প্রথমে ওই বাসভবনের একজন করোনায় আক্রান্ত হন। তারপর কেয়ারটেকারদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাদেরও রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর গৃহকর্মীর (ফাতেমা) নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাঁরও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তারপরই মূলত ম্যাডামের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে করোনার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। এতে তাঁর পজিটিভ রিপোর্ট আসে।’
‘আমরা খুবই সতর্কতার সহিত দেখভাল করছি সবাইকে। পুরো বাসভবনকে হাসপাতালের মতো করে রাখা হয়েছে। দুই-একজনের করোনার উপসর্গ থাকলেও ম্যাডামের কোনো উপসর্গ নেই। তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। ফলে আমাদের আপাতত চিন্তা, বাসায় রেখে তাঁকে চিকিৎসা করানো। তবে রাজধানীর একটি হাসপাতালের একটি কেবিন আমরা ঠিক করে রেখেছি। সেখানে সব কথা-বার্তা বলে রেখেছি। যদি কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাব।’ বলছিলেন ডা. মামুন।
এদিকে আজ সকাল থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি করোনার রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, ৭৪ বছর বয়সী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ওই রিপোর্টটির বিষেয় জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘ব্যাপারটি আমি আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। ব্যাপারটি তাঁর ব্যক্তিগত। এতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।’
তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান আজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁর করোনা পজিটিভ, এটা শতভাগ সত্য।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।
গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউর প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।