খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ চায় ২০ দল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ চান ২০ দলের নেতারা। গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে কারামুক্ত হলেও জোট নেতাদের সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। ফলে জোট নেত্রীর শারীরিক অবস্থা জানা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ আগামী দিনের রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করা এবং সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে চায় ২০ দল।
গতকাল রোববার রাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে জোট নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের এ ইচ্ছার কথা জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ দলের শরিক ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল আমাদের জোটের বৈঠক হয়েছে দীর্ঘদিন পর। সব শেষ মিটিং হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, আর গতকাল। এর মাঝে জোটের কোনো বৈঠক হয়নি। এ ছাড়া আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়েছেন তিন মাসের বেশি সময়, অথচ আমরা এখনো ওনার সঙ্গে কথা বলতে, দেখা করতে পারিনি।’
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘যেহেতু ম্যাডাম কারামুক্ত হওয়ার পর ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাক্ষাৎ করেছেন, তাই জোটের শরিক হিসেবে আমরাও সাক্ষাৎ করতে চাই তাঁর শারীরিক অবস্থা, আগামী দিনের রাজনৈতিক করণীয়সহ সব বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা জানতে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘আমি জোটের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এটি দলীয়ভাবে আলোচনা করে জানাবেন। এ ছাড়া আমরা তাঁর কাছেও ম্যাডামের শরীরের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছি।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের জোটের প্রধান, অথচ তিনি কারামুক্ত হওয়ার তিন মাসেও আমরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। তাই আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। দরকার হলে আমাদের জোটের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করবে।’
জুম অনলাইনে ২০ দলের বৈঠকে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কিছু সময়ের জন্য অংশ নেন ২০ দলের শরিক ও সাবেক বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব, এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ পিপলস লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের ও বাংলাদেশ ন্যাপের একাংশের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী।
২০ দলের গতকালের বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়, করোনাভাইরাস, চিকিৎসা ব্যবস্থার দুরবস্থা, কৃষকদের ঋণ প্রণোদনা দেওয়া, শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরা মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পাটকল বন্ধ ও শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া, নতুন অর্থবছরের উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রত্যাখ্যান করার বিষয় ও সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় সরকার চুপ থাকার প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন আইনকে কালো আইন আখ্যা দেন নেতারা। করোনা মহামারির মধ্যে এ ধরনের আইন করার বিষয়টিকে দূরভিসন্ধিমূলক বলে মত দেন জোট নেতারা।