খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে জঘন্য নাটক করছে সরকার : মির্জা ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার জঘন্য নাটক করছে মন্তব্য করে নাটক বন্ধ করে জীবনরক্ষায় বেগম জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আদালতে বিএনপিরপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ ক্ষমার অযোগ্য বলার আগে আওয়ামী লীগকে নিজেদের অতীতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি নির্ধারণে আজ শনিবার রাজধানীতে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা করে বিএনপি। বৈঠক শেষে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ঠিকাদারি মনে করলেও তাদের হাতেই বারবার ধংস হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বন্দি রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের বাধায় আটকে আছে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে তারা জঘন্য একটি নাটক করছে, এই নাটক বাদ দিয়ে দয়া করে একজন দেশপ্রেমিক নেতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তাঁর জীবন রক্ষা করার জন্য দয়া করে নাটক বাদ দিয়ে তাঁকে জামিনে মুক্ত করুন এবং তাঁকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিন। অন্যথায় তখন আপনারাই ক্ষমার অযোগ্য হবেন।’
বৃহস্পতিবার আদালতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ ও তাণ্ডব ক্ষমার অযোগ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব কথা বলার আগে একবার নিজেদের পেছনটা দেখার চেষ্টা করেছেন। তারা কি একবারও মনে করেছেন, তাঁরা কী করেছিলেন? আমাদের আইনজীবীরা তো একটাও খারাপ কাজ করেনি। যারা ছিলেন তারা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের দাবি কথা উত্থাপন করেছেন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল রোববার ঢাকায় থানায় থানায় এবং সারা দেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। একইসঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস পালনে বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে নেত্রী (খালেদা জিয়া) সারা জীবন গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে। এই বেগম খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন। যখন তাঁর স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা যখন বেগম জিয়ার জামিন না দেওয়ার পরও জামিন দেওয়ার দাবিতে অবস্থান করেছেন তখন সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন, আইনজীবীদের তাণ্ডব ক্ষমার অযোগ্য। অথচ তারা কি তাদের পেছন দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? তাঁরা যেভাবে প্রধান বিচারপতির এজলাসে ভেঙেছে, বিচারপতিদের কামরা ভাঙচুর করে আদালতে লাঠি মিছিল করেছে। হাইকোর্টে বস্তি বসিয়েছে। এসব কি জনগণকে মনে করিয়ে দিতে হবে? বিএনপির আইনজীবীরা দাবি জানিয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে থাকে তাহলে আপনারা ক্ষমা পেলেন কী করে?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অতি দ্রুত খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। না হলে দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনারাই ক্ষমার অযোগ্য হবেন। দেয়ালের লেখাগুলো পড়ুন, জনগণের ভাষা বুঝুন। আপনারা তো উন্নয়ন উন্নয়ন করেন, অথচ পেঁয়াজের দাম তো কমেই নাই উল্টো বেড়েই চলছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোভাব দেখলে মনে হয় তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ঠিকাদার। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র তারা সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, সে স্বপ্ন তারা শেষ করে দিয়েছে। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের হাতেই বারবার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। তারা ৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করেছে, সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেছে। আবার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতা দখল করে আছে বন্দুকের জোরে।
আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দানবদের পরাজিত করতে হবে। আমরা স্বাধীনতার মাসে শপথ নিয়ে এ দানবকে পরাজিত করতে পারি একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে। ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অফিসের সামনে আবার আগের সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পুলিশ র্যাব আমাদের ভয় দেখানোর জন্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি
১। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
২। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা। আলোচনা সভা শেষে জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
৩। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে গমন ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে বিএনপির জাতীয় নেতারাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
৪। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ একটি বিজয় র্যালি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। র্যালিতে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন অংশগ্রহণ করবে।
৫। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজস্ব আঙ্গিকে কর্মসূচি প্রণয়ণ করে তা বাস্তবায়ন করবে।
৬। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল দেশের বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করবে।
৭। অনুরুপভাবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
৮। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ কার্যালয় এবং নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতেও আলোক সজ্জা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি
১। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় আাগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ বিএনপির উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে দুপুর ২টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
২। দিবসটি উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সকালে বিএনপির জাতীয় নেতারা মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী মাজারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
মহান বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে যৌথসভায় গৃহীত কর্মসূচি সফল করতে ঢাকাসহ সারা দেশের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানানো হয়।