খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় হতাশ-ক্ষুব্ধ বিএনপি, রোববার বিক্ষোভ
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ তাঁর দল বিএনপি।
দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মানুষ আশা করেছিল, দেশের সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থা মানুষের সর্বশেষ আশা-আকাঙ্ক্ষার স্থল, সেখান থেকে তাদের নেত্রী সুষ্ঠু বিচার পাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখান থেকে তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।
একইসঙ্গে আদালত খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
এরপর সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করেন নেতারা। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে দল ও দেশের মানুষের ‘ক্ষোভ ও হতাশার’ কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। একই দিনে ঢাকা মহানগরের সব থানায় থানায় দুপুর ২টায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন থেকে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এ ছাড়া দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ এবং ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দলের পক্ষ থেকে পালন করা হবে।
‘মামলা হচ্ছে প্রধান অস্ত্র’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে মানুষের যে আস্থা রাষ্ট্রের প্রতি রয়েছে সেই আস্থা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকার দেশের সব গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলো আস্তে আস্তে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে তারা একটা পুতুল সরকার গঠন করেছিল আর এবারের নির্বাচন ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। এটা করে আবারও একটা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেছে। তখন থেকে আমরা লক্ষ্য করছি, তারা বিচার ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলেছে, প্রশাসন দখল করেছে, পার্লামেন্টে এককতন্ত্র করে ফেলেছে এবং মিডিয়ার ওপর জোর করছে।’
সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা এদেশে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতির সৃষ্টি করেছে। যাতে করে সবাই ভয়ের মধ্যে থাকে। মামলা হচ্ছে তাদের প্রধান অস্ত্র। আর সেই অস্ত্র তারা প্রথম থেকেই ব্যবহার করে আসছে। রাজনৈতিকভাবে তারা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, বিরোধীদলকে মোকাবেলা করতে মিথ্যা মামলা আর প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। এভাবেই তারা ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকের এই রায়ে আমরা হতাশ, স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।’
পার্লামেন্ট বাতিল করে নতুন নির্বাচন দাবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। আমরা দিনগুলোকে এজন্যই স্মরণ করতে চাই যে, দেশের মানুষের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাদের সামনে যে মূল চেতনা ছিল সেটি হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু আজ ৪৮ বছর পরেও আমরা সেই স্বপ্ন লালন করেছি, সেই স্বপ্ন তারা আজ খানখান করে দিয়েছে।’
‘আমরা এ দিনটিকে আরো বেশি করে স্মরণ করতে চাই। কারণ, এই চেতনাকে ধারণ করে যাতে আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারি। এর জন্য যিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যাতে মুক্ত করতে পারি; সেজন্যই আমরা এই দিনগুলোকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে চাই।’
জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পার্লামেন্ট বাতিল করে নতুন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সন্ধ্যা ৬টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুরু হওয়া বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান।
এ সময় খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী জয়নাল আবেদীনও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।