খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ সহানুভূতি দেখিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপির নেতাদের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার অনুমতি এবং দেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়ে তাঁরা সর্বোচ্চ সহানুভূতি দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার অপরাহ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দোষী সাব্যস্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার পাশাপাশি কেবল প্রতিহিংসার বশবর্তী ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার দিনে জন্মদিন না হওয়া সত্বেও কেবল কষ্ট দেওয়ার জন্য জন্মদিন পালনের মতো অমানবিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতাদের প্রশ্ন করেন, ‘তারা আমাদের কাছে কী আশা করছে? আমরা তাঁকে বাড়িতে থাকতে এবং দেশের সেরা হাসপাতালে অবাধে চিকিৎসা নিতে দিয়েছি। এটা কি যথেষ্ট নয়? এটা কি বিরাট উদারতা নয়? আমরা এটা (উদারতা) দেখিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক, জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ব্যাপারে যুবলীগকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক যুব নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তৃতা করেন। সাবেক যুবলীগ নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য মির্জা আযম এবং হারুনুর রশিদ বক্তৃতা করেন। যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল সভাটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি এবং বিশিষ্ট বাউল শিল্পী শফি মণ্ডল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুবসমাজ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। সেজন্য ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারটা যুবসমাজকে উৎসর্গ করেই তৈরি হয়েছে- ‘তারুণ্যের উন্নতি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য তারুণ্যের শক্তিটাকেই আমরা গুরুত্ব দিয়েছি এবং তরুণ সমাজকে আমরা তৈরি করতে চেয়েছি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। শিক্ষায়-দীক্ষায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। যাতে করে এই তরুণ সমাজই আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে সব থেকে দামি যে হাসপাতাল, সব থেকে ব্যয়বহুল সেখানেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। আর তারেকের স্ত্রীও তো ডাক্তার, শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে।’
‘তারপরেও ১৫ আগস্ট সে জন্মদিন পালন করে অথচ জিয়ার সঙ্গে তার ম্যারেজ সার্টিফিকেট কিংবা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পাসপোর্টেও যে জন্ম তারিখ বা খালেদা জিয়ার মায়ের বিবৃতি অনুযায়ীও জন্মতারিখটা ১৫ আগস্ট নয়। তার চার/পাঁচটা জন্ম তারিখ রয়েছে এবং জন্মসাল নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন করার অর্থটা কি সেদিন আমরা যারা বাবা, মা-ভাইসহ আপনজন হারিয়েছি তাদেরকে কষ্ট দেওয়া? তাহলে আমার কাছে আর কত আশা করে তারা কীভাবে আশা করে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’