খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এটাই তো বেশি
বিএনপির চেয়াপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাঁকে (খালেদা জিয়া) কারাগার থেকে বের করে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এটাই তো বেশি। এর বাইরে আর কী চাওয়ার আছে তাদের।’
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে তাঁর সদ্য সমাপ্ত সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়বস্তু এবং এ সফরের অর্জিত সাফল্য তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলেনে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ ও অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা করবে কি না এবং অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেবে কি না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান?
সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারগার থেকে বের করে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছি, এটাই কি বেশি না?’
একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকে পাল্টা প্রশ্ন করে আরও বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করতো, আপনি কি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করিয়ে আবার বিচার না করে পুরস্কৃত করতো, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিতো, তাদের জন্য আপনি কী করতেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের আগে জাতীয় সংসদে আমি বিরোধী দলের যে আসনটিতে বসতাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে খুনি কর্নেল রশিদকে নির্বাচিত করে এনে বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে আমার ওই আসনটিতে বসানো হলো। এটা কে করেছিল? খালেদা জিয়াই তো করেছিল। খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর বললো, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিজেই গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম আত্মহত্যা করতে। কোটালিপাড়ায় বোমা পোঁতার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোনোদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। ভেবেছিলেন আমি তো মরেই যাবো। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? আমার বেলায় হচ্ছে, রাখে আল্লাহ মারে কে?’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এরপরও খালেদা জিয়ার ব্যাপারে এত দয়া দেখাতে এলে অন্তত আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত। অন্তত আমাকে এ খালেদা জিয়ার বিষয়ে কিছু বলার আগে লজ্জা হাওয়া উচিত। যারা আমার বাপ, মা ও ছোট ভাই রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে। তারপরও আমরা এত অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই অন্তত আমরা তাকে তার বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার হাতে যতটুকু রয়েছে এক্সিকিউটিভ আদেশ দিয়ে আমি সেটুকু করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরে দুর্নীতি করে করে এ দেশটাকে একেবারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সংসদে একদিনও আলোচনা করতে দেয়নি। এতবড় অমানবিক যে তার ব্যাপারেও আমরা মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যতটুকু পাওয়ার আমি দেখিয়েছি। আর কতো চান? আর কতো চান, আমাকে বলেন? এখন তিনি অসুস্থ। আমি তো বললাম, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? সেটি মনে করেই বসে থাকেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। যেটা করার করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিসে দুই সপ্তাহের সরকারি সফর শেষে গত রোববার দেশে ফেরেন। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর দুই সপ্তাহের সফরে স্কটল্যান্ডের বন্দরনগরী গ্লাসগো পৌঁছান তিনি।
গ্লাসগোতে প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর ৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা লন্ডনের উদ্দেশে গ্লাসগো ত্যাগ করেন।
৯ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা প্যারিসের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান’,ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন,প্যারিস শান্তি ফোরাম এবং ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী গত রোববার দেশে ফেরেন।