‘খারাপ ছবি জোড়া দিয়ে নেটে ছেড়ি দিল, অপমানে মেয়ে মরি গেছে’
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কলাগাছী গ্রামের নিতাই মণ্ডলের মেয়ে বিউটি মণ্ডল (১৭) এবার এসএসসি পাস করেছিল। কয়েকদিন আগে বিউটির মুখমণ্ডলের সঙ্গে বিবস্ত্র এক নারীর ছবি জোড়া লাগিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। পরিবারিকভাবে এজন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর গতকাল বুধবার দুপুরে বিউটি মণ্ডলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিউটির বাবা নিতাই মণ্ডলের অভিযোগ, একই গ্রামের দোলুয়া শহীদ জিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় রায় এই ছবিটি তৈরি করে ভাইরাল করেছে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বিউটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগও আনেন তিনি।
নিতাই মণ্ডল আরো জানান, ওই ছবি গত বৃহস্পতিবার তাকে একজন পাঠান। পরে শনিবার তালা থানায় গিয়ে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সে সময় বিউটিও তাঁর সঙ্গে ছিল। জিডি করার সময় থানার এসআই সুব্রত তাঁকে বলেন, ‘পুলিশকে সময় দিতে হবে।’ এই ঘটনা যাচাই করে তারপর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
‘কিন্তু মেয়ে মারা যাওয়ার আগে পুলিশ কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি’, যোগ করেন নিতাই মণ্ডল।
নিতাই মণ্ডলের স্ত্রী আনিশা মণ্ডলেরও একই অভিযোগ। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিতো তালি আমার মেয়ে মরত না। আমি ওই ছেলের ফাঁসি চাই। আমি বিচার চাই। আমি আমার মেয়ের জন্য পাগল হয়ি গেছি।’
আনিশা মণ্ডল কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে মুখ দেখাতে না পেরি মরি গেছে। আমার বুকটা ফেটি যাচ্ছে। আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই তবুও সে চলি গেল। আমার মেয়ের মুখের সঙ্গে খারাপ ছবি জোড়া লাগিয়ে নেটে ছেড়ে দিল। সেখানে আমার মেয়ের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে ছেড়ি দিল। আরো কত খারাপ খারাপ কথা লিখল। কিন্তু পুলিশ কিছুই বলল না। আমার মেয়ে মরি যাওয়ারও অনেক পরে পুলিশ এলো। আমি আর বিউটির বাবা মেয়ের লাশ নামাইছিলাম। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার মেয়ের সৎকার দেওয়া হয়েছে। ভগবান এর বিচার করবেন।’
নিতাই মণ্ডল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শনিবার কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রোববার আমি থানার ওসিকে ফোন দিলাম। ওসির কাছে এই জিডির কাগজ এখনো পৌঁছায়নি বলে আমাকে জানালেন। তারপর এই ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারপর থেকে মানুষ আমাদের ভুল বুঝে নানা কথা বলতে শুরু করল। অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার মেয়ে গলায় দঁড়ি দিল।’
নিতাই মণ্ডল আরো বলেন, ‘নেটে ছবি ছেড়ে দেওয়ার পর আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল, এক মাস আগে মৃত্যুঞ্জয় রায় বিউটিকে নেটে ছবি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। কারণ, ওই ছেলে আমার মেয়েকে বিরক্ত করত। মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইত। কিন্তু আমার মেয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইত না। তখন ওই ছেলে আমার মেয়েকে বলেছিল, তুই যদি আমার সঙ্গে কথা না বলিস, তাহলে আমি এমন কাজ করব যাতে তুই সমাজে মুখ দেখাতি পারবি না। এরপর ওই ছেলে তো নেটে ছবি ছেড়েই দিল।’
তবে তদন্তে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল। তিনি আজ রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। এটা তো আইনের ব্যাপার। তদন্তকারী এসআই বোধহয় আট বা নয় তারিখে গিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় রায়কে ধরতে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।’
ওসি মেহেদি রাসেল আরো বলেন, ‘বিউটির মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশটি নিচে নামানো ছিল। পরে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় গতকাল। পরে আজ বৃহস্পতিবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার রাতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মৃত্যুঞ্জয়কে আসামি করে বিউটির কাকা দীপঙ্কর মণ্ডল মামলা করেছেন।’