কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চুনকুটিয়ায় অবস্থিত ওই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। এ সময় ৩৫ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে গতকাল দিবাগত রাত ১টা থেকে এখন পর্যন্ত আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বরত পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন—ইমরান, রায়হান, বাবলু, সুজন, আলাউদ্দীন, খালেক, জিনারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও সালাউদ্দিন। তাঁরা সবাই চুনকুটিয়া এলাকায় থাকেন এবং ওই কারখানাতেই কাজ করতেন।
এর আগে গতকাল এ ঘটনায় দগ্ধ ৩৫ জনকে বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধিকাংশের মেজর বার্ন হয়েছে। শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শরীরেও অনেক পুড়েছে। অনেক রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’ কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে বলেও জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির কাছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে কেরানীগঞ্জ, পোস্তগোলা ও সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কাজ করেছে। পুলিশ, র্যাব ও এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই কারখানায় আরেক দফা আগুন লেগেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। তাঁরা জানান, কারখানায় ওয়ান টাইম জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
দগ্ধদের অধিকাংশই কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁদের শরীর পুড়ে গেছে। তাঁরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। অল্প সময়ে এত বেশি সংখ্যক রোগী চলে আসায় বিভাগীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
এদিকে, গতকাল রাতে ঢামেক হাসপাতালে দগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে আসেন কেরানীগঞ্জের সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এর আগে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারখানাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্লাস্টিকের কারখানাটিতে প্রায় ৭০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। হঠাৎ করে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। কারখানাটি চালানোর অনুমতি মালিকের ছিল না। তিনি বিনা অনুমতিতে কারখানাটি চালাচ্ছিলেন।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।