কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হওয়ার কারণ জানাল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু তাই নয়, ইভিএমের মাধ্যমে ফল পাল্টে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

আজ রোববার ইসির যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত ১৫ জুন কুসিক নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে বেসরকারি ফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজনা, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান ও হাতাহাতি হলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে রিটার্নিং অফিসার নির্বিঘ্নে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, নিবন্ধ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশিত তথ্য ও সংবাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক হতে পারে বিধায় কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা ও বিবৃতি প্রদান আবশ্যক মনে হয়েছে।

ইসি জানায়, কোনো কোনো (সব নয়) পত্র-পত্রিকার নিবন্ধ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বক্তারা এ সময়কে এক বা দেড় ঘণ্টার বিলম্ব বলে রহস্য-অঘটন ইত্যাদিও ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি মোটেই তা ছিল না। বিরাজিত অবস্থায় চূড়ান্ত ফল প্রকাশে উল্লিখিত কারণে কম-বেশি ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিলম্ব হয়েছিল। 

এ অবস্থায় মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে জনৈক ব্যক্তি ফল ঘোষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে একটি টেলিফোন কলে ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস হয়েছে। ফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে ইভিএমে ধারণকৃত ভোটের ফল পাল্টে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০৫টি কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএম থেকে মুদ্রিত ফল এবং প্রার্থীদের এজেন্ট এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের সই করা ফলের সব কপি প্রার্থীদের এজেন্টদের সরবরাহ করা হয়েছে। 

পরবর্তী সময়ে প্রিসাইডিং অফিসার নিজে রিটার্নিং অফিসারের কাছে এসে একটি কপি সরবরাহ করেন। রিটার্নিং অফিসার তা একত্রীকরণ করে ফল ঘোষণা করেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের ইভিএম থেকে মুদ্রিত সব কেন্দ্রের ফল, প্রার্থীর এজেন্ট এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা ফলের কপি কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও স্বচ্ছ করতে প্রথমবারের মতো প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনকে অধিকতর নিরপেক্ষ করার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব না দিয়ে বাইরে থেকে কর্মকর্তাদেরকে সাময়িকভাবে এনে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল। 

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের তথ্য ধারণ ও পরিবেশনের জন্য অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া এ নির্বাচনে সহিংসতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভোটারদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত ছিল। 

ইসি আরও জানায়, ৫৯ শতাংশ ভোটের হারকে কেউ কেউ কম বলে গণমাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। বলা আবশ্যক, ইভিএমে কারো পক্ষে দুবার বা অপরের ভোট প্রদান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বিধায় ব্যালটে ভোটের চেয়ে কম হতে পারে। নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে, আন্তরিক ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সবাই কমিশনকে তাদের দায়িত্ব আরও দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে সহায়তা করবেন।